আধুনিক যান্ত্রিক জীবনের প্রভাবে আমাদের শারীরিক ও মানসিক চাপ, দীর্ঘমেয়াদি রোগ বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে ঘুমের সমস্যাও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে।
অনেকেই ঘুমের ওষুধের ওপর ধীরে ধীরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ছি। কিন্তু ঘন ঘন ঘুমের ওষুধ সেবন শরীরে কতটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, সে ব্যাপারে সম্যক ধারণা থাকা জরুরি।
ঘুমের ওষুধ কতটা ক্ষতিকর জানেন?, প্রায়ই ঘুমের ওষুধ খেলে যে ক্ষতিগুলো হয়
দেশে এখন তরুণ-তরুণীদের মধ্যে অনেকেই ঘুমের জন্য ওষুধের ওপর নির্ভরশীল হন। এছাড়া সাধারণত রোগীদের ঘুমের সমস্যা দূর করতে ডাক্তাররা ঘুমের ওষুধ নেয়ার পরামশ দেন। মানসিক চাপ, অবসাদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে ভালো ঘুমের আশায় অনেকেই ঘুমের ওষুধ নিয়ে থাকেন।
তবে ঘুমের উদ্দেশ্যে নিয়মিত নেয়া হলে একটা সময় শরীর ওই ওষুধটির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, ঘুম ভালো হওয়ার উদ্দেশ্যে ঘুমের ওষুধ নেয়া হলেও এ অভ্যাসের দীর্ঘকালীন প্রভাব পড়ে শরীরে ওপর।
আরো পড়ুন: পুরুষাঙ্গের বড় করার ব্যায়াম
তন্দ্রাচ্ছন্নতা
যদি ভুল সময়ে আপনি ঘুমের ওষুধ খান তাহলে আপনার শরীরে তা প্রভাব ফেলতে পারে। যদি আগের দিন রাতে আপনি ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরেও ভাল ঘুম না হয়, তার প্রভাব পরেরদিন বেলা অবধি থাকতে পারে। কিংবা অনেক রাতে ওষুধ খেলেও পরের দিন সকাল পর্যন্ত তার প্রভাব থাকতে পারে।
হ্যালোসিনেশন
ঘুমের ঔষধ একটি নেশা দ্রব্য মতই কাজ করে। ঘুমের ঔষধ গ্রহণকারীর হ্যালোসিনেশন সমস্যাগুলো দেখা দেয়। ঘুমের ওষুধের তালিকায় রয়েছে বহুল প্রচলিত নেশা দ্রব্যগুলো যা আমাদের শরীরের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর।
ব্যবহারে পরিবর্তন
অনেক সময় ঘুমের ওষুধের নিয়মিত সেবন মানুষের আচার-ব্যবহারে পার্থক্য তৈরি করতে পারে। মুড সুইং, খিটখিটে মেজাজ প্রভৃতি নানারকমের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
নির্ভরশীলতা
নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খেতে খেতে ওই ধরনের ওষুধে শরীর অভ্যস্ত হয়ে যায়, ফলে একটা সময়ের পর ওষুধ শরীরে কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়। তখন ওষুধের মাত্রা বাড়াতে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে এমনটা চলতে থাকলে তা সত্যিই শরীরের পক্ষে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে।
অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে খারাপ করে
দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খেতে থাকলে তা শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গকেও খারাপ করতে থাকে। শরীরের বর্জ্যও বিনা বাধায় শরীর থেকে বেরতে পারে না। ফলে দীর্ঘমেয়াদে তা শরীরকে অসুস্থই করে।
আরো পড়ুন: সন্তান জন্মদানের পর সহবাস
নেশা
নিয়মিত ঘুমের ওষুধ খেতে খেতে ওষুধের প্রতি একটা আসক্তি তৈরি হয়। ওষুধ ছাড়া ঘুমই হতে চায় না। তাই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কখনওই ঘুমের ওষুধ খাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
মৃত্যু
অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবন করলে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ঘুমের ঔষধ মানুষের হার্ট ও ব্রেনের রক্তনালীর রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। আবার অনেকসময় অতিরিক্তি ঘুমের ওষুধ খেলে প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে। এমনকি অনেকে কোমায় চলে যেতে পারে সেই সাথে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।
অবসাদ
ঘুমের ওষুধের কারণে, কারও কারও ক্ষেত্রে, মানসিক রোগের সমস্যা, চণ্ডালে রাগ, হতাশার মতো সমস্যা বাড়তে পারে।
ক্যান্সার ও মৃত্যুর আশংকা
গবেষণায় দেখা যায় যারা ঘুমের ঔষধ সেবন করেন তাদের অন্যান্যদের তুলনায় ক্যান্সারে আক্রান্তের ঝুঁকি অনেক বেশী থাকে। ঘুমের ঔষধ অনেকাংশেই দেহে ক্যান্সার কোষ উৎপাদনে সহায়তা করে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ঘুমের ঔষধ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তারগণ।
মানসিক সমস্যা ও শারীরিক সমস্যা
দীর্ঘসময় ঘুমের ঔষধ সেবনের ফলে ঘুমের মধ্যে হাটার সমস্যা এবং স্মৃতিভ্রষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও যারা নিয়মিত ঘুমের ঔষধ খান তাদের ব্যবহারে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। অনেকেই আংজাইটিতে ভোগেন এবং খুবই খিটমিটে মেজাজ প্রকাশ করতে থাকেন।
আরো পড়ুন: মাথা ব্যথার দোয়া,মাথা ব্যথা দূর করার দোয়া
ঘুমের ওষুধ না খেয়েই রাতে নিয়মিত যা করবেন
বাইরে থেকে ফিরে গোসল সেরে নিন। সারা দিনের কান্তি এক নিমিষে চলে যাবে
সন্ধ্যার পরই চা-কফি খাওয়া বন্ধ করে দিন
ঘুমোতে যাওয়ার বেশ কিছুক্ষণ আগে টিভি, কম্পিউটার বন্ধ করুন
পরের দিনের কাজের পরিকল্পনা আগেই করে ফেলুন, টেনশনে ঘুম নষ্ট হবে না
ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন
রাত ১০টা / ১১টার মধ্যেই ঘুমোতে যান। এ সময় বিছানায় গেলে ভালো ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে
বিছানা আর শোবার ঘর যেন আরামদায়ক হয়। বেশি গরম বা বেশি ঠাণ্ডা যেন না হয় এবং সেখানে যেন বেশি শব্দ না হয়
নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন। হাঁটা বা সাঁতার কাটা শরীরের জন্য ভাল
প্রিয় জীবনসঙ্গীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখুন, সারাদিনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় শেয়ার করুন
চেষ্টা করুন দুশ্চিন্তা না করার
সব ধরনের মাদক থেকে দূরে থাকুন
যদি ঘুম না আসে, জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা না করে উঠে বই পড়ুন, টিভি দেখুন অথবা পছন্দের গান শুনুন
সুযোগ পেলেও দিনে বেশি সময় ঘুমাবেন না
ঘরে বেশি আলো ঢুকে যেন ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটায় তা নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনে ভারি পর্দা ব্যবহার করুন।
শোবার ঘরটি অযথা একগাদা জিনিস দিয়ে ভরে রাখবেন না।
আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট