সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি, সানস্ক্রিন নিয়ে আপনাদের সকল জিজ্ঞাসা এবং যাবতীয়

 

সানস্ক্রিন ত্বকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে সানস্ক্রিন ত্বকে একটি আবরণের মতো কাজ করে। তাই ‘সান-সূর্য’ ও ‘স্ক্রিন-পর্দা’ নামে পরিচিত। সানস্ক্রিন নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেক ধরনের প্রশ্ন থাকে।  সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে যা জানা জরুরি, সানস্ক্রিন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম,সানস্ক্রিনের ব্যবহার ও সতর্কতা

সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে যেসব বিষয় জানা জরুরি, সানস্ক্রিন নিয়ে আপনাদের সকল জিজ্ঞাসা এবং যাবতীয়


সানস্ক্রিন কখন ব্যবহার করতে হবে, কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, আগে কি ব্যবহার করতে হবে, পরে কি ব্যবহার করতে হবে, কতক্ষণ পরপর ব্যবহার করতে হবে, ইত্যাদি এ ধরনের বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন জেগে থাকে।

 

কী ধরনের সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন

বাজারে বিভিন্ন ধরনের উপায়ে সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। যেমন, ক্রিম, জেল, লোশন, স্প্রে ইত্যাদি। সানস্ক্রিন ব্যবহার করার গুরুত্ব অপরিসীম। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। কিন্তু সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ইউভিএ, ইউভিবি ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। সানস্ক্রিন বা সানব্লক সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে মানুষের ত্বককে সুরক্ষিত রাখে। আলট্রা ভায়োলেট এ রশ্মি আমাদের ত্বকে এইজিং, পিগমেন্টেশন, কালচে দাগ, বয়সের ছাপ, বলি রেখা ইত্যাদির জন্য দায়ী। আল্ট্রা ভায়োলেট বি রশ্মির জন্য আমাদের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের জ্বালাপোড়া হতে পারে। এমনকি ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। স্বাভাবিক, মিশ্র, তৈলাক্ত, শুষ্ক, অতি সংবেদনশীল ত্বক, অর্থাৎ প্রত্যেক ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রে ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন নির্বাচন করা উচিত। এটি কেনার আগে অবশ্যই সঠিক সানস্ক্রিন কিনছেন কিনা এবং তার উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ঠিক আছে কিনা তা দেখে তারপরে ব্যবহার করুন।

কখন ব্যবহার করবেন

যারা দীর্ঘ সময় ধরে চুলার কাজ করেন কিংবা সূর্যালোকে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্তত ২০ মিনিট আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করে তারপর চুলা বা সূর্যালোকের কাছে যাওয়া উচিত। দুই ঘণ্টা পরপর আবার সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।

আরো পড়ুন: পুরুষাঙ্গের বড় করার ব্যায়াম

কেন ব্যবহার করবেন

মানুষের ত্বকের স্তরে মেলানোসাইট নামে কোষ রয়েছে। সেই কোষ থেকে মূলত মেলানিন তৈরি হয়। অতিবেগুনি রশ্মির ফলে সেই মেলানিনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ত্বকে প্রথম দিকে কিছুটা লালচে এবং আস্তে আস্তে কালচে আবরণ তৈরি হয়। যারা সানস্ক্রিন ব্যবহার করেন না, তাদের ত্বকে একটা সান বার্ন হয়ে থাকে।

ব্যবহারের আগে যা জানা জরুরি

সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে আরেকটি বিষয় খেয়াল করা জরুরি। এসপিএফ মানে সান প্রটেকটিভ ফ্যাক্টর অর্থাৎ ত্বক কতক্ষণের জন্য সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে নিরাপদে থাকবে, সেই সময়টা মূলত এসপিএফ দেখে বুঝা যায়। এসপিএফ যত বেশি হবে, সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বক ততবেশি সময় সুরক্ষিত রাখবে। আমাদের দেশের জন্য এসপিএফ অন্তত ৩০ থেকে ৫০ ব্যবহার করা উচিত। তবে যারা সরাসরি সূর্যালোক বা চুলার কাছে কাজ করে থাকেন তাদের জন্য এসপিএফ ৫০ সবচেয়ে ভালো। তাই, সানস্ক্রিন কেনার সময় খেয়াল করবেন যে, এসপিএফের পাশে প্লাস চিহ্ন আছে কিনা। প্লাস চিহ্ন যত বেশি হবে সুরক্ষা ততবেশি হবে।

অন্য কিছু ব্যবহার করা যাবে কিনা

অনেকে জানতে চান, সানস্ক্রিনের পাশাপাশি ময়েশ্চারাইজার বা মেক-আপ প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে কিনা। অবশ্যই ব্যবহার করা যাবে। প্রথমে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। তারপর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। তারপর সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। আজকাল বাজারে এমন কিছু মেক-আপ প্রসাধনী পাওয়া যায় যেগুলোতে সানস্ক্রিন দেওয়া থাকে। সূর্যালোকের তীব্রতা না থাকলেও অর্থাৎ মেঘাচ্ছন্ন দিন হলেও অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে।

আরো পড়ুন: সন্তান জন্মদানের পর সহবাস

সানস্ক্রিনের ব্যবহার

রোদের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক বাঁচাতে সানস্ক্রিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রসাধনী। তবে অনেক ক্ষেত্রেই সঠিকভাবে ব্যবহার না করার কারণে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা পাওয়া যায় না।

রূপচর্চাবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে সানস্ক্রিন ব্যবহারের সাধারণ কিছু ভুলের বিষয় উল্লেখ করা হয়।

- ঠিক আগের মুহূর্তে নয় বরং বের হওয়ার কিছুক্ষণ আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই মেডিকাল সেন্টারের ত্বকবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জেনেট গ্রাফ বলেন, “ঘর থেকে বের হওয়ার অন্তত আধা ঘণ্টা আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। এতে প্রসাধনী ঠিকভাবে কাজ শুরু করতে পারে।”

- শুধুমাত্র মুখে এবং হাতে নয় বরং পুরো শরীরের যেসব অংশ রোদের সংস্পর্শে আসতে পারে সেখানে সানস্ক্রিন লাগানো উচিত। নইলে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়, জানালেন জন হপকিন্স এসক্লেরোডারমা সেন্টারের ডা. নোয়েলে শেরবার।

- শুধু শরীরের ত্বক নয় ঠোঁটের ত্বকও রোদের তাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। মুখ বা শরীরের অন্যান্য অংশের ত্বকের তুলনায় ঠোঁটের ত্বক পাতলা হয়। যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই ঠোঁটে এসপিএফযুক্ত লিপ বাম ব্যবহারের পরামর্শ দেন ডা. গ্রাফ।

- ঠোঁটের মতো পা, হাত, কান, গলার পেছনে ইত্যাদি অংশেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি। যা অনেক সময়ই এড়িয়ে চলেন বেশিরভাগ মানুষ। তবে এসব অংশও সূর্যের তাপে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

- গরমে ঘামের কারণে বা পানি লাগলে সানস্ক্রিন ধুয়ে যায়, এ বিষয়টি অনেকেই লক্ষ রাখেন না।

ডা. শেরবার বলেন, “যখন ঘাম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে বা পানির সংস্পর্শে যেতে হতে পারে তখন অবশ্যই ‘নন-ওয়াটার-রেজিস্টান্ট’ সানস্ক্রিন বেছে নিতে হবে।”

- শরীর এবং ত্বকের জন্য আলাদা সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হয়, যা অনেকেরই জানা নেই।

“শরীরের ত্বকের তুলনায় মুখের ত্বক কোমল হয়। তাই মুখের ত্বকে যেন কোনো ধরনের সমস্যা বা ব্রণ না হয় সেজন্য বিশেষ ফর্মুলার সানস্ক্রিন তৈরি করা হয়। শরীরের জন্য অ্যালকোহল ছাড়া সানস্ক্রিন বেছে নিতে হবে।” বললেন ডা. শারবার।

- মেঘলা দিনে অনেকেই মনে করেন রোদের তাপে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

ডা. গ্রাফ বলেন, “সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রায় ৮০ ভাগই আটকাতে পারে না মেঘ। তাই মেঘলা দিনেও অন্যান্য সময়ের মতো সানস্ক্রিন ব্যবহার করা জরুরি।”

- ঘরের ভিতরে বা গাড়ির কাচ বন্ধ থাকলে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচা সম্ভব, এমন ধারণা একেবারেই ভুল।

ডা. শেরবার বলেন, “জানালা বা উইন্ডশিল্ড ‘ইউভিবি’ রশ্মি আটকে দেয় তাই রোদে পোড়া দাগ হয় না। তবে ইউভিএ রশ্মি আটকাতে পারে না জানালার কাচ। তাই ত্বক পুরোপুরি সুরক্ষিত নয় ঘর বা গাড়ির ভিতরে। এজন্য ঘরে থাকলেও এসপিএফযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।

- এসপিএফ আট বা ১৫ যুক্ত প্রসাধনী সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করলেও সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে বাঁচতে পর্যাপ্ত নয়। তাই পর্যাপ্ত মাত্রার এসপিএফযুক্ত সানস্ক্রিন বেছে নেওয়া দরকার। এসপিএফ ৩০ যুক্ত সানব্লক শতকরা ৯৭ ভাগ সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করে। যেখানে এসপিএফ ৫০ শতকরা ৯৮ ভাগ ক্ষতিকর রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়।

- একবার সানস্ক্রিন লাগালেই তা সারাদিন কাজ করবে, এমন ধারণা একেবারেই ভুল।

আরো পড়ুন: মাথা ব্যথার দোয়া,মাথা ব্যথা দূর করার দোয়া

ডা. গ্রাফ বলেন, “ঘর থেকে বের হওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার যেমন জরুরি তেমনি কিছুক্ষণ পরপর সানস্ক্রিন লাগানো ততটাই কার্যকর। প্রতি ৮০ মিনিট পরপর সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।”

- বেশিরভাগ সানস্ক্রিনের মোড়কেই চোখের চারপাশের ত্বক এড়িয়ে ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া থাকে। তবে চোখের আশপাশের কোমল ত্বকের জন্য ইউভি রশ্মি অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই চোখ এবং চোখের ত্বক রোদ থেকে বাঁচাতে ইউভি প্রোটেকশনযুক্ত সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিত।

আপনার জন্য স্বাস্থ্য বিষয়ক আরো কিছু পোস্ট

স্বাস্থ্য উদ্ভিদ ও প্রাণী ঔষধি গুন গোপন সমস্যা রূপচর্চা রোগ প্রতিরোধ

0 Comments

Advertisement 2

Advertisement 3

Advertisement 4