শিশুর শ্রেষ্ঠ খাদ্য “মায়ের বুকের দুধ “, শিশুর জন্য বুকের দুধের উপকারিতা, মায়ের বুকের দুধে পুষ্টির গুনাগুন।


শিশুর শ্রেষ্ঠ খাদ্য “মায়ের বুকের দুধ “, শিশুর জন্য বুকের দুধের উপকারিতা, মায়ের বুকের দুধে পুষ্টির গুনাগুন। 


আল্লাহপাকের সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত মায়ের বুকের দুধ । পৃথিবীতে এই একটি জিনিসের কোন বিকল্প-ই হয় না , তা সে যতোই দামী খাবার কিংবা পুষ্টিকর খাবার ই হোক না কেন । মায়ের বুকের দুধ শিশুর পুষ্টির সঠিক উৎসই নয় পাশাপাশি শিশু সুস্বাস্থ্যের ও সুষম বিকাশের জন্য একটি অপরিহার্য। আসুন , এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিই ।


প্রথমত বলতে হয় শালদুধের কথা । সন্তান জন্মদানের পর প্রথম যে হলুদভাব, আঠালো দুধ নিঃসৃত হয় সেটাকে শাল দুধ বলে। এটিকে নবজাতকের প্রথম টিকা হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধক সকল উপাদান পাওয়া যায় এই শালদুধে । অথচ , অনেকে অজ্ঞতাবশত  শিশুকে শালদুধ খাওয়ান না ।


ডাক্তারি ও বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মাতৃদুগ্ধের বিকল্প নেই। কোনো শিশুখাদ্য মায়ের দুধের সমকক্ষ হবার বিন্দুমাত্র যোগ্যতা রাখে না। শিশুর জন্মের পর থেকে দুই মাস পর্যন্ত তাকে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর, দুই থেকে ছয় মাস পর্যন্ত তিন থেকে চার ঘণ্টা পরপর আর ছয় মাস পরবর্তী সময় চার থেকে পাঁচ ঘন্টা পর পর মায়ের বুকের দুধ পান করানো প্রয়োজন ।


মায়ের বুকের দুধের স্বাস্থ্যগত ও পুষ্টিগত উপকারিতা অপরিসীম । নিচে তার কয়েকটি উপকারিতা উল্লেখ করা হলো ।


১। ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন এর তথ্য মতে শিশুকে জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে যদি বুকের দুধ পান করানো হয় সেক্ষেত্রে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি ৩১ শতাংশ কমে যায়। যেসব শিশুরা বুকের নিয়ম মেনে অর্থাৎ ছয় মাস পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ আর দুই বছর পর্যন্ত বাড়তি খাবারের পাশাপাশি বুকের দুধ পান করে তাদের মৃত্যুহার যারা বুকের দুধ পান করে না সেই শিশুদের তুলনায় ১৪ গুণ কম।


২। জন্ম পরবর্তী ছয় মাস যেসব শিশু শুধুমাত্র বুকের দুধ পান করবে এমনকি একফোঁটা পানিও পান করবে না, তাদের বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগ, কণ্ঠনালী ও কানের ইনফেকশন জনিত বিভিন্ন রোগের আশংকা খুব কম থাকে । 


৩। শিশুকে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে বুকের দুধ । কারণ, এটি বিভিন্ন এন্টিবডিতে পরিপূর্ণ থাকে । যেসব শিশুরা মায়ের বুকের দুধ পান করে না বা সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে মায়ের বুকের দুধ পান করে না তাদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, যেমন, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ইত্যাদি ।


৪। শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে মায়ের বুকের দুধে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। পূর্ণ দুই বছর পর্যন্ত যে শিশুরা মায়ের বুকের দুধ পান করে তাদের বুদ্ধিমত্তা যারা মায়ের দুধ সঠিকভাবে পান করে না তাদের তুলনায় অনেক বেশি ।


৫। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, মায়ের দুধে যে উপাদান রয়েছে তাতে শিশুর ক্যান্সার প্রতিরোধ সহায়ক হয়। এছাড়াও জীবনের পরবর্তী পর্যায়গুলোতে ডায়াবেটিস, ওজনাধিক্য ও কিছু কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে যে সকল শিশুর জন্মের পর সঠিকভাবে নিয়ম মেনে মায়ের বুকের দুধ পান করে তাদের। আর তাদের জীবনে পরবর্তী পর্যায়গুলোতে হাড় ও অস্থির গঠন মজবুত থাকে।


সর্বোপরি মায়ের বুকের দুধ পান করার ফলে  শিশুর সাথে মায়ের আত্মিক বন্ধন তৈরি হয়, ফলে সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়ে এবং শিশুর ভবিষ্যত মন মানসিকতা ভালো হয় , শিশু হয়ে ওঠে জ্ঞানী, আত্মবিশ্বাসী ও সামাজিক । অতএব, শখ করে বাজারের দুধজাত পণ্য না খাইয়ে যথাসম্ভব শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোই সর্বোত্তম পন্থা । 

0 Comments

Advertisement 2

Advertisement 3

Advertisement 4