Subject :ছোটো মাছ খাওয়ার উপকারিতা ও পুষ্টি উপাদান,যে কারণে সবার মাছ খাওয়া উচিত,ছোট মাছের পুষ্টি, মাছ খাওয়া কেন ভালো,মাছের খাদ্যগুণ ও উপকারিতা, দেহে মাছের উপকারিতা, মাছের উপকারী উপাদান শরীরে যেভাবে কাজ করে,মাছ খাওয়ার উপকার বলে শেষ করা যাবে না, মাছের উপকারিতা, যে কারণে মাছে খাবেন
মাছ এর পুষ্টি উপাদানঃ
প্রোটিন এর একটি উৎকৃষ্ট উৎস হওয়াতে স্বাস্থ্যকর পেশী, অঙ্গ এবং রক্তনালিগুলির গঠন বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রোটিন কোষ বিভাজন, চুলের বৃদ্ধি এবং হরমোন সংকেতকে সহায়তা করে।
সামুদ্রিক মাছ আয়োডিন সমৃদ্ধ এটি এমন একটি প্রয়োজনীয় খনিজ যা আমাদের শরীর নিজ থেকে উৎপাদন করতে পারে না।
মাছে এসব পুষ্টি উপাদান ছাড়াও রয়েছে ;
- ভিটামিন ডি
- ভিটামিন বি ১২
- আয়রন
- ফসফরাস
- আয়োডিন
১০০ গ্রাম কাতলা মাছ থেকে প্রাপ্ত পুষ্টিউপাদান নিম্নরূপঃ
শক্তি – ১০৩ কিলোক্যালরি
পানি – ৭৬.৭ গ্রাম
প্রোটিন – ১৯.৯ গ্রাম
ফ্যাট – ২.৬ গ্রাম
ক্যালসিয়াম – ৫৩০ মিলিগ্রাম
আয়রন – ০.৬ মিলিগ্রাম
ম্যাগনেশিয়াম – ৩৬ মিলিগ্রাম
ফসফরাস – ২৩৫ মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম – ২৯৩ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম – ৫৬ মিলিগ্রাম
জিঙ্ক – ০.৪৮ মিলিগ্রাম
কপার – ০.০৩ মিলিগ্রাম
মাছ খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ
মাছের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ,খনিজ এবং ফ্যাটি অ্যাসিড যেগুলি আপনার শরীরের জন্য স্বাস্থ্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
মাছে থাকা ভিটামিন বি ১২ আপনার সুস্থ লোহিত রক্ত কনিকা, ডিএনএ, প্রজনন এবং নার্ভ ফাংশন বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১) ব্রেনের পাওয়ার বৃদ্ধি করেঃ
মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি আসিড মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ । নিয়মিত এটি খেলে ডিএইচএ ফ্যাটি এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
এছাড়া মাছের তেল বার্ধক্য জনিত মস্তিস্কের রোগ আলজিমার ও পারকিন্সন প্রতিরোধ করে। মাছে ভিটামিন এ, ডি, বি, রয়েছে।
বিশেষত ভিটামিন বি ১২, ভিটামিন বি ৬,ভিটামিন বি৩ ,ফোলেট রয়েছে যা ব্রেন ফাংশন ভালো রাখতে ও ব্রেনের কোষগুলো তে শক্তি সরবরাহ করে।
২) মাছ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ
বর্তমান সমাজে মানসিক চাপে ভোগা রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি । আর এর সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। স্ট্রেস বা মানসিক চাপ আমাদের দেহের অনেকটা ক্ষতি করে।
মানসিক চাপ কমাতে মাছের এক অনন্য ভুমিকা রয়েছে । মাছে ভিটামিন বি 12 যা মানসিক স্বাস্থ্যর জন্য ভালো ।
মাছে নায়াসিন স্নায়ুতন্ত্র কে সঠিক রাখতে সাহায্য করে । সামুদ্রিক মাছে আয়োডিন রয়েছে যা থাইরয়েড গ্রন্থির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সামুদ্রিক মাছ খাওয়া দরকার। সিজিওফ্রেনিয়া একটি মানসিক রোগ মাছের তেল গ্রহন এর মাধ্যমে এই রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব।
৩) হার্টকে ভালো ও সুস্থ রাখেঃ
হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক মানুষের অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী। একটি বিশ্লেষণ অনুসারে যারা নিয়মিত মাছ খান তাদের হার্ট অ্যাটাক ,স্ট্রোক এবং হৃদরোগ থেকে মৃত্যুর ঝুকি কম থাকে।
কানাডার হ্যামিলল্টনের ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন এপিডেমিওলজিস্ট অ্যান্ড্রু মেন্ট বলেছেন
“কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্তদের মধ্যে মাছ খাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষামুলক সুবিধা রয়েছে ।
তৈলাক্ত মাছের মধ্যে সালমন,টুনা, ম্যাকরেল এবং সার্ডাইন রয়েছে । এইসব মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।
এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। নিয়মিত মাছ খেলে হৃদ রোগের ঝুঁকি ৩৬ % কমে। হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঝুঁকি ১২ % কমায়।
৪) ত্বক ভালো রাখেঃ
চর্বিযুক্ত মাছ স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য দুর্দান্ত খাবার।
এই মাছ ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এর গুরুত্বপূর্ণ উৎস যা ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি সানবার্ন হতে ত্বককে রক্ষা করে।
ফ্যাটি মাছ ভিটামিন ই এর সমৃদ্ধ উৎস । ত্বকের জন্য ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
হাঙর মাছের তেলে স্কোয়ালিন নামক হাইড্রোকার্বন পাওয়া যায় যা ত্বকের জন্য ব্যবহৃত ক্রিম এর উপাদান।
৫) দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ
নিয়মিত মাছ খেলে দৃষ্টিশক্তির উন্নতি হয় । বয়স বাড়ার সাথে সাথে ম্যাকুলার ডিজেনারেশন (এএমডি) নামে একটি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এটি বয়স্ক মানুষদের অন্ধতের একটি কারন। একটি গবেষণায় দেখা যায় যারা সপ্তাহে দুবার নিয়মিত মাছ খায় তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
এছাড়াও মাছের তেলে ভিটামিন এ রয়েছে এটি রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে ।
৬) ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ
মাছের তেলে প্রচুর পরিমাণে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড বিদ্যমান যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
গবেষণায় দেখা যায়, মাছে বিদ্যমান ফ্যাটি অ্যাসিড ব্রেস্ট ,কোলন ,প্রস্ট্রেট ,অগ্নাশয় এর ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৭) কোলেস্টেরল কমায়ঃ
মাছ খেলে ভালো কোলেস্টেরল এইচ ডি এল (HDL) এর মাত্রা বৃদ্ধি পায় আর খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এর মাত্রা হ্রাস পায়।
নিয়মিত এটি খেলে উচ্চরক্তচাপ এর ঝুঁকি কমে।
গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পযালোচনায় ,গবেষকরা দেখেছেন
মাছের তেল থেকে প্রতিদিন যে ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় তা ট্রাইগ্লিসারাইড এর মাত্রা ২৫ %-৩০% হ্রাস করতে পারে ।
৮) হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভালোঃ
মাছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি রয়েছে যা অস্টিওপোরেসিস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
মাছের হাড়ে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে যা রিকেটস প্রতিরোধে সাহায্য করে।
মাছের ভিটামিন এ সুস্থ হাড় ও দাঁতের গঠনে ভুমিকা পালণ করে।সালমন ,টুনা,সার্ডিন , ম্যাকরেল ইত্যাদি মাছে ভিটামিন ডি রয়েছে ।
৯) মাছ থাইরয়েড গ্রন্থির জন্য ভালোঃ
সামুদ্রিক মাছ আয়োডিন এর একটি ভালো উৎস । আয়োডিন থাইরয়েড ফাংশন ভালো রাখতে সহায়তা করে । এছাড়াও মাছে সেলেনিয়াম আছে যা থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোন
সংশ্লেষণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
১০) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ
মাছের তেল অ্যান্টি- ইনফ্লামেটরি গুণ সম্পূর্ণ । চর্বিযুক্ত মাছ টাইপ ১ এবং টাইপ -২ ডায়াবেটিস উভয়ই রক্ষা করতে পারে । মাছের তেলের ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড গুলোর মধ্যে রয়েছে ইকসাপেন্টানইক অ্যাসিড (ইপিএ),ডকোসাহেক্সানইক অ্যাসিড (ডিএইচএ), এবং আলফা লিনোলিক অ্যাসিড (এএলএ) বিদ্যমান। এই উপাদানগুলি অটোইমিউন রোগ যেমন আর্থ্রাইটিস ,ক্রোনস ডিজিস ,করোনারি হৃদরোগ ,সোরিইয়াসিস ,লুপাস এরিথেটোসাস ,মাইগ্রেনের মাথা ব্যাথা প্রদাহজনিত রোগ প্রতিরোধ করে।
১১) বিষন্নতা কমাতে সাহায্য করেঃ
বেশিরভাগ মাছই ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি বিষন্নতা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
১২) মাছ ভিটামিন ডি এর ভালো উৎসঃ
ভিটামিন ডি এর বেশ ভালো একটি উৎস মাছ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০% মানুষের ভিটামিন ডি এর চাহিদা মাছ দ্বারা পূরণ করা হয়। কিছু মাছ যেমন,কড লিভার ওয়েল,স্যামন,হারিং ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। আপনি যদি খুব বেশি রোদে যেতে না পারেন এবং ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত সমস্যায় ভুগতে থাকেন তাহলে আপনার দৈনন্দিন ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরন করতে খেতেই পারেন মাছ।
১৩) শিশুদের হাঁপানি প্রতিরোধে সহায়তা করেঃ
হাঁপানি এমন একটি রোগ যা শ্বাসনালীর দূর্ঘস্থায়ী প্রদাহের ফলে সৃষ্টি হয়ে থাকে। বেশ কিছু গবেষণায় বলা হয়, যেসব শিশুরা নিয়মিত মাছ খায় তাদের হাঁপানির ঝুঁকি ২৪% কম থাকে। তবে এই বিষয়ে এখন পর্যাপ্ত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
১৪) ঘুমের মান উন্নত করেঃ
ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তির সংখ্যা বর্তমানে ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে নিয়মিত চর্বিযুক্ত মাছ (স্যামন)খাওয়া আপনার ঘুমের মান উন্নত করতে সক্ষম।
মাছ খাওয়ার ঝুঁকিঃ
মাছ খাওয়ার একদিকে যেমন পুষ্টিকর উপকারীতা রয়েছে ,অন্যদিকে তেমন এর সম্ভাব্য ঝুঁকিও রয়েছে।
তবে এর বেশিরভাগই পরিবেশ দূষণ জনিত। যেমন, মাছের পেটে অনেক সময় পারদ ও পিবিসি পাওয়া যায়। পারদ এবং পিসিবি এর মত মতো রাসায়নিক যৌগগুলি পচনশীল নয়। এই অবস্থায় এগুলো খেলে শরীরের ক্ষতি হবে ।
তাছাড়া যারা পুকুরে মাছ চাষ করে তাঁরা পুকুরে পোকামাকড় বা আগাছা মারতে কীটনাশক ব্যবহার করেন এটি মাছেরাও খায় যা খেলে আমাদের শরীরের ক্ষতি হয় । মূলত এইসব কারনেই গর্ভবতী মহিলাদের জন্য মাছ খাওয়া ভালো হলেও সাবধানতা অবলম্বন করতে বলা হয় ।
পারদ মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে । এটি ছোট বাচ্চাদের বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে । যেসব মাছ আমাদের শরীর এর ক্ষতি করতে পারে তা হল ,
১।হাঙ্গর
২।টাইল ফিশ
৩।কিং ম্যাকরেল
৪।স্লেমহেডস
৫।টুনা
অনেক সময় চাষ করা মাছে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যায় তাই প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন মাছই বেশি নিরাপদ ।সিফিশ বা সামুদ্রিক মাছে অনেকের অ্যালার্জি থাকে,সেক্ষেত্রে তারা নদীর মাছ খেতে পারেন ।
সুস্থ থাকতে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহনের বিকল্প নেই। তাই শরিরকে সুস্থ ও নীরোগ রাখতে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পরিমান মতো মাছ রাখতে পারি।