পুরুষের জটিল রোগের সাধারণ লক্ষণ পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসা

পুরুষের জটিল রোগের সাধারণ লক্ষণ পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসা

 পুরুষত্বহীনতা হলো একজন পুরুষের যৌ’নমিলন করতে তার পুরু’ষাঙ্গের উথানের যতটা প্রয়োজন হয়, সেটুকু উথান রাখতে অসমর্থতা। যদিও পুরুষত্বহীনতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে।


তবে এ সমস্যা যেকোনো বয়সে ঘটতে পারে। মাঝে মাঝে লিঙ্গোথানের এ সমস্যা হলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।কিন্তু এ অবস্খা চলতে থাকলে তা মনের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং স্ত্রীর সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে। এ অবস্খা আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরায়।পুরুষত্বহীনতাকে আগে বলা হতো ইমপোটেন্স!



বর্তমানে একে ইরেকটাইল ডিসফাংশন বলা হয়। এক সময় এটা নিয়ে কেউ আলোচনা করতে চাইত না। যেন এটা নিষিদ্ধ কোনো


বিষয়। ধারণা করা হতো এটা একটি মানসিক বিষয় কিংবা বয়স বাড়ার সাথে সাথে এটা একটি প্রাকৃতিক পরিণতি। এসব ধারণা বর্তমানে পরিবর্তিত হয়েছে। এখন জানা গেছে যে পুরষত্বহীনতা মানসিক সমস্যার চেয়ে শারীরিক সমস্যার কারণে সবচেয়ে বেশি হয়, আর অনেক পুরুষের ৮০ বছর বয়সেও স্বাভাবিক লিঙ্গোথান হয়।



যদিও যৌ’ন বিষয় নিয়ে চিকিৎসকের সাথে কথা বলাটা অনেকে লজ্জাজনক মনে করতে পারেন, তবু এ অবস্খার উন্নতি করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। অধিকাংশ পুরুষের যৌ’নক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এ চিকিৎসায় ওষুধ থেকে শুরু করে সার্জারিরও প্রয়োজন হতে পারে। কখনো কখনো অন্য কারণ যেমন হৃদরোগ পুরুষত্বহীনতা ঘটায়। সুতরাং পুরুষত্বহীন সমস্যাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। কারণ এটা মারাত্মক স্বাস্খ্য সমস্যার উপসর্গ হতে পারে।



উপসর্গ: পুরুষত্বহীনতার প্রধান উপসর্গ হলো যৌন মিলনের জন্য পুরুষাঙ্গের পর্যাপ্ত উথানে অসমর্থতা। এ সমস্যা একজন পুরুষের জীবনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ সময়ে দেখা দিলে সে পুরুষকে পুরুষত্বহীন বলা হয়। অধিকাংশ পুরুষের লিঙ্গোথানে মাঝে মাঝে সমস্যা হতে পারে এবং সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু লিঙ্গোথানের সমস্যা একটানা চলতে থাকলে সেটা পুরুষত্বহীনতার চিহ্ন। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই এর মূল্যায়ন করতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরুষত্বহীনতা অন্য স্বাস্খ্যসমস্যার প্রথম চিহ্ন যার চিকিৎসা প্রয়োজন।



কারণ: পুরুষের যৌ’ন উত্তেজনা একটি জটিল প্রক্রিয়া যার সাথে মস্তিষ্ক, হরমোন, আবেগ, স্নায়ু, মাংসপেশি এবং রক্তনালী জড়িত। যদি এসব তন্ত্রের কোনোটি আক্রান্ত হয়­ কিংবা কোনোটির ভারসাম্য নষ্ট হয়­ তাহলে পুরুষত্বহীনতা ঘটতে পারে। লিঙ্গোথান সম্পর্কে ধারণা: লিঙ্গে দু’টি সিলিন্ডারের আকৃতি বিশিষ্ট স্পঞ্জের মতো কাঠামো থাকে (করপাস কেভারনোসাম) যা লম্বালম্বিভাবে মূত্রনালীর সমান্তরাল অবস্খান করে।



(মূত্রনালী বীর্য ও প্রস্র্রাব বহন করে)।যখন একজন পুরুষ যৌ’ন উত্তেজিত হয়, স্নায়ুর উদ্দীপনা সিলিন্ডারে স্বাভাবিক পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি রক্ত প্রবাহ ঘটায়। এই হঠাৎ রক্তের আগমন স্পঞ্জের মতো কাঠামোকে প্রসারিত করে এবং লিঙ্গকে সোজা ও শক্ত করার মাধ্যমে উথান ঘটায়। অবিরাম যৌ’ন উত্তেজনা লিঙ্গে উচ্চমাত্রার রক্তপ্রবাহ অক্ষুণí রাখে এবং লিঙ্গের বাইরে রক্ত বেরিয়ে যাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। ও লি’ঙ্গকে শক্ত রাখে। বী’র্যপাতের পরে কিংবা যৌন উত্তেজনা প্রশমিত হলে অতিরিক্ত রক্ত স্পঞ্জটির বাইরে চলে যায়, অত:পর লিঙ্গ তার শিথিল আকৃতিতে ফিরে আসে।



পুরুষত্বহীনতার শারীরিক কারণ: এক সময় চিকিৎসকরা ধারণা করতেন পুরুষত্বহীনতার প্রাথমিক কারণ হলো মানসিক। কিন্তু তা সত্য নয়। যদিও লি’ঙ্গোথানের ক্ষেত্রে চিন্তা ও আবেগ সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে কিছু শারীরিক ব্যাপার যেমন দীর্ঘস্খায়ী স্বাস্খ্যসমস্যা কিংবা কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সাধারণত পুরুষত্বহীনতা ঘটায়।



পুরুষত্বহীনতার সাধারণ কারণগুলো- হৃদরোগ, রক্তনালীতে প্রতিবন্ধকতা হলে (অ্যাথেরোসক্লেরোসিস), উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্খূলতা এবং বিপাক প্রক্রিয়ায় সমস্যা। পুরুষত্বহীনতার অন্য কারণগুলো- কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণ, তামাকের ব্যবহার, মদ্যপান ও মাদক সেবন, প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসা, পারকিনসন’স রোগ, মাল্টিপল স্কেরোসিস, হরমোনজনিত অস্বাভাবিকতা যেমন টেসটোসটেরনের মাত্রা কমে যাওয়া (হাইপোগোনাডিজম), পেরোনি’জ রোগ, তলপেটে কিংবা স্পাইনাল কর্ডে অপারেশন বা আঘাত। কিছু ক্ষেত্রে পুরুষত্বহীনতাকে গুরুতর স্বাস্খ্য সমস্যার এক নম্বর চিহ্ন হিসেবে দেখা হয়।



পুরুষত্বহীনতার মানসিক কারণগুলো: যেসব শারীরিক বিষয়গুলো পুরুষাঙ্গের উথান ঘটায় সেসব বিষয়কে উজ্জীবিত করতে মস্তিষ্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে রয়েছে যৌ’ন উত্তেজনার অনুভূতি থেকে শুরু করে লি’ঙ্গোথান। বেশ কিছু বিষয় যৌন অনুভূতিতে বাধা দিতে পারে এবং এর ফলে­ পুরুষত্বহীনতা ঘটতে পারে।



এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে­ বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, অবসাদ ও যৌ’ন সঙ্গিনীর সাথে দূরত্ব কিংবা দ্বন্দ্ব।পুরুষত্বহীনতার শারীরিক ও মানসিক কারণগুলো পরস্পরের ওপর প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, সামান্য শারীরিক সমস্যা যা যৌ’ন উত্তেজনাকে কমিয়ে দেয়, সেটা মানসিক দুশ্চিন্তা ঘটাতে পারে। আর দুশ্চিন্তার সাথে লি’ঙ্গোথানের সম্পর্ক রয়েছে। দুশ্চিন্তা মারাত্মক পুরুষত্বহীনতা ঘটাতে পারে।ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় পুরুষত্বহীনতা ঘটাতে পারে। এসবের মধ্যে রয়েছে:



বুড়িয়ে যাওয়া: ৭৫ বছর ও তার বেশি বয়সী পুরুষের শতকরা ৮০ ভাগেরই পুরুষত্বহীনতা ঘটে। অনেক পুরুষেরই বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের যৌ’ন কাজে পরিবর্তন শুরু হয়। লি’ঙ্গ উথান হতে অনেক সময় নিতে পারে, লি’ঙ্গ তেমন শক্ত নাও হতে পারে কিংবা অনেকক্ষণ ধরে লি’ঙ্গ স্পর্শ করার পর শক্ত হতে পারে। তবে পুরুষত্বহীনতা স্বাভাবিক বয়স বাড়ার অনিবার্য পরিণতি নয়। পুরুষত্বহীনতা সচরাচর বৃদ্ধ পুরুষদের দেখা দেয়। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের স্বাস্খ্যের অবনতি ঘটে কিংবা তারা এমন সব ওষুধ খান যেসব ওষুধ লি’ঙ্গের উথানে বাধা দেয়।



দীর্ঘস্খায়ী স্বাস্খ্যের অবনতি: ফুসফুস, লিভার, কিডনি, হৃৎপিণ্ড, নার্ভ, ধমনী বা শিরার অসুখগুলো পুরুষত্বহীনতা ঘটাতে পারে। একইভাবে এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের অস্বাভাবিকতা, বিশেষ করে ডায়াবেটিস পুরুষত্বহীনতা ঘটাতে পারে। আপনার ধমনীগুলোতে প্ল্যাক জমলে (অ্যাথেরোস্কেরোসিস) তা আপনার লিঙ্গে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবেশে বাধা প্রদান করতে পারে। কিছু পুরুষের ক্ষেত্রে, স্বল্প মাত্রার টেস্টোসটেরন পুরুষত্বহীনতা ঘটাতে পারে।



কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন: কিছু ওষুধ যেমন অ্যান্টি ডিপ্রেসান্ট, অ্যান্টিহিস্টামিন এবং উচ্চরক্তচাপ, ব্যথা ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধগুলো­ পুরুষাঙ্গের রক্ত প্রবাহে কিংবা স্নায়ুর উদ্দীপনায় বাধা প্রদান করে পুরুষত্বহীনতা ঘটাতে পারে। ট্রাংকুলাইজার এবং ঘুমের ওষুধও একই সমস্যা ঘটাতে পারে।



মাদক সেবন: অ্যালকোহল, মারিজুয়ানা কিংবা অন্যান্য মাদকের অপব্যবহার সচরাচর পুরুষত্বহীনতা ঘটাতে পারে এবং যৌ’ন ইচ্ছা কমিয়ে দিতে পারে। মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা বা বিষণ্ণতা : মানসিক এ অবস্খাগুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরষত্বহীনতা ঘটায়। ধূমপান: ধূমপান পুরুষত্বহীনতা ঘটাতে পারে। কারণ এটা শিরা ও ধমনীতে রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দেয়। যেসব পুরুষ বেশি ধূমপান করেন তাদের পুরুষত্বহীনতা ঘটার আশঙ্কা অনেক বেশি।



স্খূলতা: যেসব পুরুষ অতিরিক্ত মোটা, তারা স্বাভাবিক ওজনের পুরুষদের তুলনায় পুরুষত্বহীনতায় বেশি ভোগেন। মেটাবলিক সিনড্রোম : এই সিনড্রোমের মধ্যে রয়েছে পেটে চর্বি জমা, অস্বাস্খ্যকর কোলেস্টেরল ও ট্রাই গ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ এবং ইনসুলিন রেজিট্যান্স। দীর্ঘ সময় বাইসাইকেল চালানো: দীর্ঘ সময় বাই সাইকেল চালালে সাইকেলের সিট থেকে নার্ভের ওপর চাপ পড়ে এবং লিঙ্গের রক্ত চলাচলের ওপরও চাপ পড়ে। ফলে সাময়িক পুরুষত্বহীনতা ও লিঙ্গে অসাড়তা দেখা দেয়।


কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন? যদি পুরুষত্বহীনতা সাময়িক বা স্বল্পমেয়াদি সমস্যার চেয়ে বেশি হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক আপনার পুরুষত্বহীনতার সঠিক কারণ নির্ণয় করে আপনার যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করবেন। যদিও পুরুষত্বহীনতা আপনার একান্ত ব্যক্তিগত বা লজ্জাকর সমস্যা মনে হতে পারে। কিন্তু এটার চিকিৎসা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।



পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রোগ নির্ণয়: আপনার চিকিৎসক আপনাকে প্রশ্ন করতে পারেন কবে এবং কখন থেকে আপনার উপসর্গ দেখা দিয়েছে। আপনি কী কী ওষুধ গ্রহণ করেছেন এবং আপনার অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা আছে কি না। আপনার চিকিৎসক আপনার সাম্প্রতিক শারীরিক বা অবেগজনিত পরিবর্তন নিয়েও কথা বলতে পারেন। যদি আপনার চিকিৎসকের সন্দেহ হয় যে আপনার শারীরিক সমস্যা রয়েছে।



তাহলে তিনি আপনার পুরুষ হরমোনের মাত্রা দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা করতে পারেন। এ ছাড়া ডায়াবেটিস আছে কি না তা-ও দেখতে পারেন।অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে- আল্ট্রাসাউন্ড এ ক্ষেত্রে আপনার লিঙ্গের রক্তপ্রবাহ ঠিক আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হয়।



নিউরোলজিক্যাল ইভালুয়েশন: এ ক্ষেত্রে শারীরিক পরীক্ষা করে দেখা হয় আপনার জননাঙ্গের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কি না। ডাইনামিক ইনফিউশন কেভারনোসোমেট্রি অ্যান্ড কেভারনোসোগ্রাফি (ডিআইসিসি)। নকচারনাল টুমেসেন্স টেস্ট।

চিকিৎসা ব্যবস্খা: পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসা বিভিন্ন ধরনের। এর মধ্যে রয়েছে ওষুধ থেকে শুরু করে সাধারণ মেকানিকাল ডিভাইস এবং সাইকোলজিকাল কাউন্সেলিং। সঠিক চিকিৎসার জন্য পুরুষত্বহীনতার কারণ নিরূপণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি এবং আপনার সঙ্গিনী­ দু’জনেই যদি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন।



মুখে খাওয়ার ওষুধ: পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসায় মুখে খাওয়ার ওষুধের মধ্যে রয়েছে সিনডেনাফিল (ভায়াগ্রা), টাডালাফিল (সিয়ালিস) ও ভারডেনাফিল (লেভিট্রা)। এ তিনটি ওষুধই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একইভাবে কাজ করে। রাসায়নিকভাবে এগুলো ফসফোডায়াসটারেজ ইনহিবিটরস নামে পরিচিত। এ ওষুধগুলো নাইট্রিক অক্সাইডের প্রভাবকে ত্বরান্বিত করে। নাইট্রিক অক্সাইড হলো একটি রাসায়নিক বস্তু যা লিঙ্গের পেশিগুলোকে শিথিল করে। এটা রক্তের প্রবাহের পরিমাণ বাড়ায় যা লিঙ্গের উথানের জন্য অপরিহার্য। এসব ওষুধ সরাসরি লিঙ্গোথান ঘটায় না।

বিঃদ্রঃ চিকিৎসকের পরামর্শে খাবেন।



তার বদলে এরা শারীরিক ও মানসিক উদ্দীপনার পরে লিঙ্গোথান ঘটায়। অনেক পুরুষের এসব ওষুধ গ্রহণের পর লিঙ্গোথানের উন্নতি ঘটেছে। এসব ওষুধের অনেক মিল রয়েছে। তবে এদের অনেক ভিন্নতাও রয়েছে। এদের মাত্রা আলাদা, কতদিন খেতে হবে তাও আলাদা। এমনকি কার্যকারিতাও আলাদা। এসব ওষুধের রয়েছে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যা আপনার স্বাস্খ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। আবার কোন ওষুধটি কোন পুরুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। এই তিনটি ওষুধের তুলনামূলক জরিপ সরাসরি করা হয়নি।



সব পুরুষের জন্য নয়: যদিও এসব ওষুধ অনেক পুরুষকে সাহায্য করতে পারে। তবু পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসায় সব পুরুষ এগুলো সেবন করতে পারবেন না। আপনি এসব ওষুধ সেবন করবেন না যদি­ ­ আপনি অ্যানজিনার জন্য নাইট্রেট ওষুধ যেমন নাইট্রোগ্লিসারিন, আইসোসরবিড মনোনাইট্রেট এবং আইসোসরবিড ডাইনাইট্রেট সেবন করেন। আপনি রক্ত পাতলা করার ওষুধ (অ্যান্টি কোয়াগুলেন্ট) গ্রহণ করেন। ­ প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধির জন্য বা উচ্চরক্তচাপের জন্য কিছু নির্দিষ্ট আলফা ব্লকার ওষুধ গ্রহণ করেন।



ভায়াগ্রা, লেভিট্রা বা সিয়ালিস আপনার জন্য ভালো নয় যদি ­ আপনার মারাত্মক হৃদরোগ বা হার্ট ফেইলিওর থাকে, আপনার স্ট্রোক হয়ে থাকে, ­ আপনার নিন্ম রক্তচাপ থাকে, ­ আপনার অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ থাকে, ­ আপনার অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকে। এসব ওষুধ গ্রহণ করে আপনার পুরুষত্বহীনতা দ্রুত ঠিক হয়ে যাবে এমনটি আশা করবেন না। আপনার চিকিৎসক আপনার জন্য সঠিক ওষুধ ও মাত্রা নির্ধারণ করে দেবেন। মাত্রা বাড়ানো বা কমানোর প্রয়োজন হতে পারে।



অথবা ওষুধ গ্রহণকালে আপনার বিকল্প ব্যবস্খারও প্রয়োজন হতে পারে। যেকোনো ওষুধ গ্রহণের আগে­ বিশেষ করে ভায়াগ্রা, লেভিট্রা বা সিয়ালিসের ক্ষেত্রে­ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে নিন। ­ এসব ওষুধে আপনার কী উপকার হতে পারে এবং কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে তা জেনে নিন।আপনার বর্তমানে কোনো অসুস্খতা আছে কি না কিংবা আগে কোনো মারাত্মক স্বাস্খ্য সমস্যা ছিল কি না তা চিকিৎসককে অবহিত করুন। ­ আপনি কোনো ওষুধ (হার্বালসহ) খাচ্ছেন কি না তা চিকিৎসককে অবহিত করুন।



প্রোস্টাগ্লান্ডিন ই (অ্যালপ্রোস্টাডিল): দু’ধরনের চিকিৎসায় একটি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তার নাম অ্যালপ্রোস্টাডিল। অ্যালপ্রোস্টাডিল হলো হরমোন প্রোস্টাগ্লান্ডিন ই’র একটি কৃত্রিম উৎপাদন। এই হরমোন লিঙ্গের পেশি টিস্যুকে শিথিল করতে সাহায্য করে। এর ফলে লিঙ্গে উথানের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত প্রবাহিত হয়। অ্যালপ্রোস্টাডিল দু’ভাবে ব্যবহৃত হয়। নিডল ইনজেকশন থেরাপি। এ পদ্ধতিতে লিঙ্গের গোড়ায় সূক্ষ্ম সুচের সাহায্যে অ্যালপ্রোস্টাডিল ইনজেকশন দেয়া হয়। সাধারণত ৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে লিঙ্গের উথান হয় এবং তা প্রায় এক ঘন্টা থাকে।



যেহেতু এই ইনজেকশন সরাসরি স্পঞ্জের মতো সিলিন্ডারের মধ্যে যায়, যা রক্তে পূর্ণ থাকে, সেহেতু অনেক পুরুষের জন্য অ্যালপ্রোস্টাডিল হলো কার্যকর চিকিৎসা। আর যেহেতু সুচ থাকে খুবই সূক্ষ্ম, তাই ইনজেকশনের স্খানে সাধারণত তেমন ব্যথা থাকে না। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে ইনজেকশনের স্খান থেকে রক্তপাত, দীর্ঘ সময় লিঙ্গোথান এবং ইনজেকশনের স্খানে ফাইব্রাস টিস্যু গঠন। প্রতিটা ইনজেকশনের খরচ অনেক হতে পারে। অ্যালপ্রোস্টাডিল এবং অন্যান্য ওষুধের মিশ্রণে খরচ কম পড়তে পারে এবং সেটাও অনেক কার্যকর। এসব অন্যান্য ওষুধের মধ্যে রয়েছে পাপাভেরিন এবং ফেনটোলামিন। সেলফ অ্যাডমিনিস্টারড ইন্ট্রাইউরেথ্রাল থেরাপি।



এ পদ্ধতিতে ডিসপোজাবল অ্যাপলিকেটরের মাধ্যমে লিঙ্গের মাথা দিয়ে একটা ছোট অ্যালপ্রোস্টাডিল সাপোজিটরি প্রয়োগ করা হয়। এটার আকার একটা চালের দানার প্রায় অর্ধেকের মতো। এই সাপোজিটরি মূত্রনালীতে রেখে দেয়ার পর লিঙ্গের ইরেকটাইল টিস্যু সেটাকে শোষণ করে নেয়। এর ফলে রক্তপ্রবাহ বেড়ে গিয়ে লিঙ্গের উথান ঘটে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে মূত্রনালীতে ব্যথা, সামান্য রক্তপাত হওয়া, মাথা ঘোরা এবং ফাইব্রাস টিস্যু গঠন হওয়া।হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি অল্পসংখ্যক পুরুষের ক্ষেত্রে যাদের টেস্টোসটেরনের ঘাটতি রয়েছে, তাদের টেস্টোসটেরন হরমোন দিয়ে পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসা করা হয়।

পেনিস পাম্প: এ পদ্ধতিতে একটি হস্তচালিত কিংবা ব্যাটারি চালিত পাম্পসহ একটি ফাঁপা টিউব ব্যবহার করা হয়। এ টিউবটি লি’ঙ্গের ওপর রাখা হয়, তারপর পাম্প করা হয়। এর ফলে লি’ঙ্গে রক্ত প্রবাহিত হয়। একবার পর্যাপ্ত লি’ঙ্গোথান ঘটলে সেটাকে ধরে রাখার জন্য লিঙ্গের গোড়ায় একটি টেনশন রিং পরিয়ে দেয়া হয়। আপনি ভ্যাকিউম ডিভাইসটা খুলে নিতে পারেন। লিঙ্গোথান অনেকক্ষণ থাকে। যৌ’নক্রিয়ার পর টেনশন রিংটা খুলে ফেলবেন।

ভাসকুলার সার্জারি যেসব পুরুষের লিঙ্গে বা তলপেটে আঘাত পাওয়ার ফলে রক্ত প্রবাহ বìধ হয়ে গেছে, এ চিকিৎসা সাধারণত সেসব পুরুষের ক্ষেত্রে করা হয়। রক্তনালী বন্ধ হয়ে পুরুষত্বহীনতা ঘটলে অপারেশন করে তা ঠিক করা সম্ভব। এ চিকিৎসার উদ্দশ্য হলো লিঙ্গে রক্ত প্রবাহের বাধা দূর করা যাতে লিঙ্গ স্বাভাবিকভাবে উথিত হতে পারে। তবে এ অপারেশনের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য দেখা যায়নি।

পিনাইল ইমপ্লান্টস: এ পদ্ধতিতে অপারেশনের মাধ্যমে লিঙ্গের দু’পাশে একটি ডিভাইস স্খাপন করা হয় যাতে ইচ্ছে মতো লিঙ্গের উথান ঘটানো সম্ভব। এটা আপনি নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। এ চিকিৎসা ব্যয়বহুল। এ পদ্ধতি ব্যবহারের আগে অন্য পদ্ধতিগুলোর চেষ্টা করা উচিত। এ পদ্ধতিতে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সাইকোলজিকাল কাউন্সেলিং ও সেক্স থেরাপি: যদি আপনার পুরুষত্বহীনতা মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা কিংবা বিষণíতার কারণে হয় তাহলে অবশ্যই আপনি এবং আপনার সঙ্গিনী চিকিৎসকের কাছে যাবেন। চিকিৎসক আপনাদের ভালোমতো বুঝিয়ে দেবেন এবং যৌন সমস্যা নিরসনে সে’ক্স থেরাপি দেবেন। পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসায় কাউন্সেলিং খুব সহায়ক, বিশেষ করে আপনার সঙ্গিনী যদি তাতে অংশ নেয়।

কীভাবে পুরুষত্বহীনতা রোধ করবেন: যদিও অধিকাংশ পুরুষের সময়ে সময়ে পুরুষত্বহীনতার অভিজ্ঞতা ঘটে, তবে আপনি এটাকে কমিয়ে আনতে পারেন নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলে আপনার হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যবস্খা নিন।­ অ্যালকোহল পরিহার করুন।বিভিন্ন মাদক যেমন মারিজুয়ানা পরিহার করুন।­ ধূমপান ছেড়ে দিন।­ নিয়মিত ব্যায়াম করুন।­ মানসিক চাপ কমান।­ পর্যাপ্ত ঘুমান। ­ দুশ্চিন্তা বা বিষন্নতা কাটিয়ে উঠুন। ­নিয়মিত চেকাপের জন্য চিকিৎসক দেখান।

সঙ্গিনীর সহায়তা: পুরুষত্বহীনতা শারীরিক বা মানসিক বা উভয় কারণেই হোক না কেন, তা একজন পুরুষের­ এবং তার সঙ্গিনীর মনের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করে। যদি আপনি যৌ’ন স’ঙ্গমে ব্যর্থ হন তাহলে ভেঙে না পড়ে চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন, প্রয়োজনে আপনার সঙ্গিনীকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যান, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যবস্খা নিন। আপনার ব্যর্থতাকে আপনার সঙ্গিনী যেন কখনো ব্যঙ্গ না করেন, তার সহায়তা আপনার ব্যর্থতা কাটিয়ে তুলতে সাহায্য করবে। যদি আপনার সঙ্গিনী আপনাকে সাহায্য করেন তাহলে চিকিৎসার ফল ভালো হয়। দ্রুত আপনার উন্নতি ঘটবে।

বিকল্প চিকিৎসা: পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসায় বর্তমানে অনেক ওষুধে বাজার ছেয়ে গেছে। এসব ওষুধের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বেশির ভাগ ওষুধ নিরাপদ ও কার্যকর কি না তা এখনো প্রমাণিত হয়নি। এসব চিকিৎসা ও ওষুধের মধ্যে রয়েছে­ আকুপাংচার,­ ডিএইচইএ, ­ গিংক গো, এল-আর জিনিন, এসব বিকল্প চিকিৎসার ঝুঁকি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে­ বিশেষ করে যে সব পুরুষের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্খ্য সমস্যা রয়েছে কিংবা যারা অন্য ওষুধ সেবন করছেন।



কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক। অনেকে না জেনে এসব ওষুধ ব্যবহার করে ভয়াবহ পরিস্খিতির শিকার হচ্ছেন। এসব ওষুধ প্রেসক্রিপশন ওষুধের সাথে প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে এবং রক্তচাপ মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে যেসব পুরুষ নাইট্রেট সমৃদ্ধ ওষুধ খাচ্ছেন তাদের জন্য এসব তথাকথিত যৌ’নবর্ধক ওষুধ মারাত্মক বিপজ্জনক।


0 Comments

Advertisement 2

Advertisement 3

Advertisement 4