#Post ADS3

advertisement

করোনার দ্বিতীয় টেউ মোকাবিলায় প্রস্তুতি কম, শীত বাড়ছে রোগী বাড়ছে

 

করোনার দ্বিতীয় টেউ মোকাবিলায় প্রস্তুতি কম, শীত বাড়ছে রোগী বাড়ছে
করোনার দ্বিতীয় টেউ মোকাবিলায় প্রস্তুতি কম, শীত বাড়ছে রোগী বাড়ছে

ধীরে ধীরে শীতের আবহ শুরু হয়েছে দেশের সর্বত্র। যদিও এখন পর্যন্ত ঠাণ্ডার প্রকোপ কম। তবে ঋতু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতিতে দেখা দিয়েছে শুষ্ক ভাব। ফলে ধুলোবালিতে এমনিই এ সময় মানুষের মধ্যে সর্দি-জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। কিন্তু এবার করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিকে যেন আরও জটিল করে তুলেছে। 


শীতের আবহের শুরু থেকেই এখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় রোগী বাড়ার চিত্রই বলে দিচ্ছে ধীরে ধীরে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের দিকে এগোচ্ছে দেশ। 


ফলে শীত জেঁকে বসলে আগামী কয়েক মাসে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।


দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। প্রথম দিকে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু- দুটিই ছিল কম। কিন্তু যতই দিন যেতে থাকে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু ব্যাপক আকার ধারণ করে। এ সময় ভাইরাস গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নেয়। ওই সময়ে প্রথমদিকে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুধু আইইডিসিআরে সীমাবদ্ধ রেখেছিল সরকার।


কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে মার্চ মাসের শেষ দিকে পরীক্ষার কেন্দ্র বাড়ানো হয়। প্রথমে পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়ানো হয় ঢাকায়। পরবর্তী সময় অন্যান্য জেলায়ও পরীক্ষা কেন্দ্র বাড়ে। 


বর্তমানে সারাদেশের ১১৮টি ল্যাবরেটরিতে করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে। এসব ল্যাবে আগের দিন দুপুর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৯৭২টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ২ হাজার ১৯৮ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এই ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যও বলছে, ঢাকার হাসপাতালগুলোয় এখন আবার জটিল করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ফাঁকা না থাকায় অনেক রোগী বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন। 

ঢাকায় করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি ব্যবস্থাপনার নয়টি হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১১৩টি। এর মধ্যে গতকাল প্রায় ৮৬ শতাংশের বেশি আইসিইউতে রোগী ভর্তি ছিল। শুধু সরকারি নয়, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউ শয্যা ফাঁকা থাকছে কম।


ঢাকায় করোনা রোগীদের জন্য নয়টি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ রয়েছে ২০৩টি। এর মধ্যে গতকাল রোগী ভর্তি ছিল ১২৯টি শয্যায়। অর্থাৎ এখন বেসরকারি হাসপাতালেও আইসিইউ শয্যা ফাঁকা থাকছে কম। ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হলে তখন আইসিইউ পাওয়া দুষ্কর হবে। তাই আইসিইউ বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি দেওয়ার কথা এখনই জোরালোভাবে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।


স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ও জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান আমাদের সময়কে বলেন, করোনার সংক্রমণের প্রথমদিকে এটি প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যে প্রস্তুতি আমরা দেখেছি তাতে ঘাটতি ছিল। তখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ও বিভিন্ন দায়িত্ববানদের কাজের মাধ্যমে আমরা সেটি কাটাতে সক্ষম হয়েছিলাম।


কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, আমরা দেখছি আগে যে ঘাটতি, অসঙ্গতি, অসুবিধা, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাগুলো ছিল সেগুলো একই রকম আছে। দ্রুত যদি ব্যবস্থাপনার জায়গাটা ঠিক না করা হয় তা হলে আমরা আবারও সমস্যায় পড়ে যাব। এসব সমস্যা সমাধানে আমরা জাতীয় কারিগারি পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে সরকারকে অনেক পরামর্শ দিয়েছি। সেই পরামর্শগুলো আগে বাস্তবায়ন করা দরকার।


বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএম) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, করোনা সহনশীল হওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৪টি পরীক্ষা কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে।


 তখন আমরা করোনার সেকেন্ড ওয়েবের জন্য অপেক্ষা করতে বলেছিলাম। সরকার এর পর আর হাসপাতাল বন্ধ করেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছে, যদি সংক্রমণ আবার বেড়ে যায়, তা হলে বন্ধ হাসপাতালগুলো চালু করে দেবে।


ডা. ইহতেশামুল আরও বলেন, করোনা সংক্রমণের শুরুতে আমাদের অনেক ঝামেলা হয়েছে। কোনো জায়গায় চুরি-লুটপাট হয়েছে, সমন্বয়হীনতা হয়েছে, আমাদের চিকিৎসকরা ও জনগণ প্যানিক ছিল। চিকিৎসায় কী ওষুধ ব্যবহার হবে এবং চিকিৎসার প্রটোকলও বারবার পরিবর্তন হয়েছে। এখন সেটি ঠিক আছে। এখন চিকিৎসকরা অভিজ্ঞ হয়েছে কীভাবে করোনার চিকিৎসা করতে হবে। কিন্তু চিকিৎকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখনো আমরা বুঝতে পারছি না এটির কী অবস্থা হবে। আমাদের জানা মতে, হাসপাতালগুলোয় নিরাপত্তাসামগ্রী বেশি নেই। সিএমএসডিতে কী পরিমাণ আছে সেটিও নিশ্চিত নই।


 এ জায়গায় আমরা ভয় পাচ্ছি। কারণ করোনা অনেকে বেড়ে যাচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তাসামগ্রীর বিষয়ে সরকারের কী চিন্তাভাবনা, না আগের মতো হৈচৈ বেড়ে যায় কে জানে। এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা দরকার। যারা করোনা হাসপাতালে দাযিত্বপালন করেন তাদের আবাসনের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 


স্বাস্থ্যকর্মীরা দায়িত্বপালন শেষে বাসায় গেলে তার স্ত্রী-সন্তান বা পরিবারের সদস্যদের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। তাই এমন হলে তারা দায়িত্বপালন করতে চাইবে না, তখন সমস্যা হবে। সরকারের দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।


Post a Comment

0 Comments

advertisement

advertisement