লালমনিরহাটের পাটগ্রামে গণপিটুনিতে নিহত শহীদুন্নবী জুয়েল কোরআন অবমাননা করেনি বলে দাবি করেছে জাতীয় মানবধিকার কমিশন। কমিশনের অভিযোগ ও তদন্ত টিমের পরিচালক আল মাহমুদ ফাউজুল কবির বলেন, ‘মসজিদের ইমাম ও খাদেমের সঙ্গে কথা বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি নিহত জুয়েল কোরআন অবমাননা করেনি। তার বিরুদ্ধে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়ানো হয়েছে।’
আজ রোববার সকালে বুড়িমারী জামে মসজিদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও লাশ পুড়িয়ে ফেলার স্থান পরিদর্শন শেষে বিভিন্নজনের সাক্ষ্য গ্রহণের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আল মাহমুদ ফাউজুল কবির বলেন, ‘পুরো ঘটনাকে তিন ভাগে ভাগ করে তদন্ত করা হচ্ছে। সাক্ষীরা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন ফলে ঘটনাটি পরিকল্পিত কিনা তা মাথায় রেখে তদন্ত করছি।’
তিনি বলেন, নিহত জুয়েল কেন বুড়িমারীতে এলো? তাকে যখন মারধর করা হচ্ছে তখন তার সাথে থাকা অপর লোকটি তাকে রক্ষার চেষ্টা করেছে কি না? আবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি হঠাৎ করে কেন তাকে মারধর করলো? নিহত জুয়েল কোরআন অবমাননা করেছে কি না? ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য হাফিজুল নিহত জুয়েলকে অন্য স্থানে না সড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ পরিষদে আটকিয়ে কেন রাখলো? অনেক পরে কি কারণে পুলিশকে খবর দেয়া হলো? বহিরাগত লোকজন কার ডাকে আসলো? এ ঘটনায় কারও ইন্ধন আছে কিনা এসব বিষয়সহ নানা বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত করে সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পি এম রাহসিন কবির, সিনিয়ন সহকারী পুলিশ সুপার তাপস সরকার উপস্থিতি ছিলেন।
উল্লেখ্য, লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থল বন্দর কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআন শরীফ অবমাননার অভিযোগে তুলে গত বৃহস্পতিবার এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করে বিক্ষুপ্ত জনতা। পরে ওই লাশ পুড়িয়ে ফেলেছে তারা।
নিহত যুবক শহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আব্দুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক গ্রন্থাগারিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। গত বছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি।
এ ঘটনায় তিনটি পৃথক মামলা দায়ের হয়েছে। নিহতের পরিবার, বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ ও পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক এ মামলা তিনটি দায়ের করে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।