#Post ADS3

advertisement

প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস (খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ৩২৬-১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ) (প্রাচীন বাংলার গুরুত্বপূর্ণ রাজবংশ ও শাসন ব্যবস্থা)

 
প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস (খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ৩২৬-১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ) (প্রাচীন বাংলার গুরুত্বপূর্ণ রাজবংশ ও শাসন ব্যবস্থা)
প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস (খ্রিষ্টপূর্বাব্দ ৩২৬-১২০৪ খ্রিষ্টাব্দ) (প্রাচীন বাংলার গুরুত্বপূর্ণ রাজবংশ ও শাসন ব্যবস্থা)

প্রাচীন বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস (খ্রিঃপূর্ব ৩২৬-১২০৪ খ্রিঃ): শেষ অংশ

দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার স্বাধীন রাজ্য

পাল যুগের বেশির ভাগ সময়েই দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা স্বাধীন ছিল তখন অঞ্চলটি ছিল বঙ্গ জনপদের অন্তর্ভুক্ত অষ্টম শতকের মাঝামাঝি থেকে বেশ কিছু রাজবংশের রাজারা কখনো পাল রাজাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনভাবে তাদের এলাকা শাসন করতেন, আবার কখনো পাল রাজাদের অধীনতা স্বীকার করে চলতেন

খড়গ বংশ :

সপ্তম শতকের দ্বিতীয়ার্ধে মগধ গৌড়ে পরবর্তী গুপ্তবংশীয় রাজাগণ প্রভুত্ব স্থাপন করেন সময় খড়গ বংশের রাজারা দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় একটি স্বাধীন রাজ্যের সৃষ্টি করেন তাঁদের রাজধানীর নাম ছিল কর্মান্ত বাসক কুমিল- জেলার বড় কামতার প্রাচীন নামই সম্ভবত কর্মান্ত বাসক খড়গদের অধিকার ত্রিপুরা নোয়াখালী অঞ্চলের উপর বিস্তৃত ছিল

দেববংশ :

খড়গ বংশের শাসনের পর একই অঞ্চলে অষ্টম শতকের শুরুতে দেব বংশের উত্থান ঘটে বংশের চারজন রাজার নাম পাওয়া যায় এঁরা হলেন শ্রীশান্তিদেব, শ্রীবীরদেব, শ্রীআনন্দদেব শ্রীভবদেব দেব রাজারা নিজেদের খুব শক্তিধর মনে করতেন তাই তাঁরা তাদের নামের সাথে যুক্ত করতেন বড় বড় উপাধি যেমন- পরম সৌগত, পরম ভট্টারক, পরমেশ্বর মহারাজাধিরাজ ইত্যাদি তাঁদের রাজধানী ছিল দেবপর্বতে কুমিল- নিকটা ময়নামতির কাছে ছিল দেবপর্বত দেবদের রাজত্ব বিস্তৃত ছিল সমগ্র সমতট অঞ্চলে আনুমানিক ৭৪০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দেব রাজারা শাসন করেন

কান্তিদেবের রাজ্য :

সব এ্যাসাইনমেন্টর উত্তর লিংক 

More Assignment Links==>>Click

দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার হরিকেল জনপদে নবম শতকে একটি স্বাধীন রাজ্যের উদ্ভব ঘটে রাজ্যের রাজা ছিলেন কান্তিদেব দেব রাজবংশের সঙ্গে কান্তিদেবের কোনো সম্পর্ক ছিল কি-না তা জানা যায় না তাঁর পিতা ছিলেন ধনদত্ত পিতামহ ভদ্রদত্ত বর্তমান সিলেট কান্তিদেবের রাজ্যভুক্ত ছিল তাঁর রাজধানীর নাম ছিল বর্ধমানপুর বর্তমানে নামে কোনো অঞ্চলের অস্তিত্ব নেই সময়ে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় চন্দ্র বংশ বলে পরিচিত নতুন এক শক্তির উদয় হয় কান্তিদেবের গড়া রাজ্যের পতন হয় চন্দ্র বংশের হাতে

চন্দ্রবংশ :

দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার সবচেয়ে শক্তিশালী স্বাধীন রাজবংশ ছিল চন্দ্র বংশ দশম শতকের শুরু হতে একাদশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত দেড়শত বছর বংশের রাজারা শাসন করেন চন্দ্রবংশের প্রথম নৃপতি পূর্ণচন্দ্র তৎপুত্র সুবর্ণচন্দ্র সম্ভবত রোহিতগিরির ভূ-স্বামী ছিলেন সুবর্ণচন্দ্রের পুত্র ত্রৈলোক্যচন্দ্রই বংশের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর উপাধি ছিল মহারাজাধিরাজ ত্রৈলোক্যচন্দ্র হরিকেল, চন্দ্রদ্বীপ (বরিশাল পার্শ্ববর্তী এলাকা), বঙ্গ সমতট অর্থাৎ সমগ্র পূর্ব দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় নিজ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন লালমাই পাহাড় ছিল চন্দ্র রাজাদের মূল কেন্দ্র পাহাড় প্রাচীনকালে রোহিতগিরি নামে পরিচিত ছিল আনুমানিক ত্রিশ বছরকাল (৯০০-৯৩০ খ্রি:) তিনি রাজত্ব করেন

ত্রৈলোক্যচন্দ্রের সুযোগ্য উত্তরাধিকারী ছিলেন তাঁর পুত্র শ্রীচন্দ্র তাঁহার শাসনামলে চন্দ্র বংশের প্রতিপত্তি উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছায় তিনি নিঃসন্দেহে বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন তিনি পরমেশ্বর পরম ভট্টারক মহারাজাধিরাজ উপাধি ধারণ করেছিলেন তাঁর রাজ্য দক্ষিণ-পূর্ব বাংলা ছাড়াও উত্তর-পূর্ব কামরূপ উত্তরে গৌড় পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে তিনি তাঁর রাজধানী গড়ে তোলেন শ্রীচন্দ্র প্রায় ৪৫ বছর (: ৯৩০-৯৭৫ খ্রি:) শৌর্যবীর্যের সহিত রাজত্ব করেন

শ্রীচন্দ্রের পুত্র কল্যাণচন্দ্র (: ৯৭৫-১০০০ খ্রি:) পৌত্র লডহচন্দ্র (: ১০০০-১০২০ খ্রি:) চন্দ্র বংশের গৌরব অক্ষুণ্ন রেখেছিলেন লডহচন্দ্রের পুত্র গোবিন্দচন্দ্র ছিলেন শেষ চন্দ্র রাজা তাঁর রাজত্বকালে চোলরাজ রাজেন্দ্র চোল কলচুরিরাজ কর্ণ বঙ্গ আক্রমণ করেন এই দুই বৈদেশিক আক্রমণ চন্দ্র রাজার ক্ষমতা হ্রাস করে তাদের শাসনের পতন ঘটায়

বর্ম রাজবংশ :

একাদশ শতকের শেষভাগে পাল রাজশক্তি দুর্বল হয়ে পড়লে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় বর্ম উপাধিধারী এক রাজবংশের প্রতিষ্ঠা হয় বঙ্গদেশে যিনি বংশের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি হলেন বজ্রবর্মার পুত্র জাতবর্মা কলচুরিরাজ কর্ণের সাথে বর্মরা এদেশে এসেছিল বলে মনে হয় পিতার মতো প্রথম দিকে তিনিও ছিলে কলচুরিরাজ গাঙ্গেয়দেব এবং কর্ণের সামন্তরাজ কৈবর্ত্য বিদ্রোহের সময় তিনি শ্বশুর কলচুরিরাজ কর্ণের সাহায্য সমর্থনে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন বর্মদের রাজধানী ছিল বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুর জাতবর্মার পর তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র হরিবর্মা একটানা ৪৬ বছর রাজত্ব করেন পাল রাজাদের সঙ্গে তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন হরিবর্মা নাগাভূমি আসাম পর্যন্ত ক্ষমতা বিস্তার করেছিলেন হরিবর্মার পর তাঁর এক পুত্র রাজা হয়েছিলেন কিন্তু তাঁর রাজত্বকালের কোন বিবরণ পাওয়া যায় না তাঁর পর জাতবর্মার অপর পুত্র সামলবর্মা রাজা হন সামলবর্মার পুত্র ভোজবর্মা ছিলেন বর্ম রাজবংশের শেষ রাজা কেননা, তাঁর পর বংশের আর কোন বিবরণ পাওয়া যায় না সম্ভবত: দ্বাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সেনবংশীয় বিজয় সেন বর্ম শাসনের অবসান ঘটিয়ে দক্ষিণ-পূ্র্ব বাংলায় সেন বংশের শাসনের সূচনা করেন

সেন বংশ (১১৬১ খ্রি:-১২০৪ খ্রি:)

পাল বংশের পতনের পর বারো শতকের দ্বিতীয় ভাগে বাংলাদেশে সেন রাজবংশের সূচনা হয় ধারণা করা হয় তাঁরা এদেশে ছিলেন বহিরাগত তাঁদের পূর্বপুরুষদের আদি বাসস্থান ছিল সুদূর দক্ষিণাত্যের কর্ণাট কেহ কেন মনে করেন তাঁরা ছিলেন ব্রহ্মক্ষত্রিয় যে বংশের লোকেরা প্রথমে ব্রাহ্মণ থাকে এবং পরে পেশা পরিবর্তন করে ক্ষত্রিয় হয়, তাদেরকে বলা হয় ব্রহ্মক্ষত্রিয় বাংলার সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সামন্ত সেন তিনি যৌবনে কর্ণাটে বীরত্ব প্রদর্শন করে শেষ বয়সে প্রথমে বসতি স্থাপন করেন রাঢ় অঞ্চলে গঙ্গা নদীর তীরে তিনি কোনো রাজ্য প্রতিষ্ঠা না করায় সেন বংশের প্রথম রাজার মর্যাদা দেওয়া হয় সামন্ত সেনের পুত্র হেমন্ত সেনকে ধারণা করা হয় পাল রাজা রামপালের অধীনে তিনি একজন সামন্ত রাজা ছিলেন

হেমন্ত সেনের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র বিজয় সেন (১০৯৮-১১৬০ খ্রি:) সিংহাসনে আরোহণ করেন তাঁর এই সুদীর্ঘ রাজত্বকালেই সেন বংশের শাসন শক্তিশালী ভিত্তির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তিনিই সম্ভবত সামন্তরাজা হতে নিজেকে স্বাধীন রাজারূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন কৈবর্ত্য বিদ্রোহের সময় তিনি রামপালকে সাহায্য করেন একাদশ শতকে দক্ষিণ রাঢ় শূর বংশের অধিকারে ছিল বংশের রাজকন্যা বিলাসদেবীকে তিনি বিয়ে করেন বরেন্দ্র উদ্ধারে রামপালকে সাহায্য করার বিনিময়ে বিজয় সেন স্বাধীনতার স্বীকৃতি পান আবার দক্ষিণ রাঢ়ের শূর বংশের সহিত বৈবাহিক আত্মীয়তার সূত্র ধরে রাঢ় বিজয় সেনের অধিকারে আসে এরপর বিজয় সেন বর্মরাজাকে পরাজিত করে পূর্ব দক্ষিণ বাংলা সেন অধিকারে নিয়ে আসেন শেষ পাল রাজাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিজয় সেন মদনপালকে পরাজিত করে উত্তর উত্তর-পশ্চিম বাংলা হতে পালদের বিতাড়িত করে নিজ প্রভুত্ব বিস্তার করেন এরপর তিনি কামরুপ, কলিঙ্গ মিথিলা আক্রমণ করেন হুগলী জেলার ত্রিবেনীতে অবস্থিত বিজয়পুর ছিল বিজয় সেনের প্রথম রাজধানী দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করা হয় বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরে বিজয় সেন পরম মাহেশ্বর, পরমেশ্বর, পরমভট্টারক মহারাজাধিরাজ, অরিরাজ-বৃষভ-শঙ্কর প্রভৃতি উপাধি গ্রহণ করেন সেন বংশের অধীনেই সর্বপ্রথম সমগ্র বাংলা দীর্ঘকালব্যাপী একক রাজার অধীনে ছিল

ধর্মের দিক হতে বিজয় সেন ছিলেন শৈব কবি উমাপতিধর বিজয় সেন কর্তৃক অনুষ্ঠিত যাগ-যজ্ঞের কথা বলেছেন এসব যাগ-যজ্ঞ হতে অনুমান করা হয় যে বিজয় সেন বৈদিক ধর্মের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাশীল ছিলেন কিন্তু কেহ কেহ মনে করেন বিজয় সেন গোঁড়া হিন্দু ছিলেন অন্য ধর্মের প্রতি তাঁর কোন সহিষ্ণুতা ছিলনা এজন্যই বিজয় সেন তাঁর উত্তরাধিকারীদের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এদেশে বৌদ্ধধর্ম তেমন বিস্তার লাভ করতে পারেনি বিজয় সেনের পর সিংহাসনে আরোহণ করেন তাঁর পুত্র বল- সেন (১১৬০-১১৭৮ খ্রি:) তাঁর রাজত্বকালে তিনি শুধুা পিতৃরাজ্য রক্ষাই করেননি, মগধ মিথিলাও সেন রাজ্যভুক্ত করে সেন শাসন শক্তিশালী ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করেন চালুক্য রাজকন্যা রমাদেবীকে তিনি বিয়ে করেন অন্যান্য উপাধির সাথে বল- সেন নিজের নামের সাথে অরিরাজা নিঃশঙ্ক শঙ্কর উপাধি গ্রহণ করেছিলেন বৃদ্ধ বয়সে পুত্র লক্ষণ সেনের হাতে রাজ্যভার অর্পণ করে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ত্রিবেনীর নিকট গঙ্গাতীরে বানপ্রস্থ অবলম্বন করে শেষ জীবন অতিবাহিত করেন

বল- সেন অত্যন্ত সুপণ্ডিত ছিলেন বিদ্যা বিদ্বানের প্রতি তাঁর যথেষ্ট অনুরাগ ছিল তিনি বেদ, স্মৃতি, পুরাণ প্রভৃতিা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছিলেন তাঁর একটি বিরাট গ্রন্থালয় ছিল কবি বা লেখক হিসেবে সংস্কৃত সাহিত্যে তাঁর দান অপরিসীম তাঁর পূর্বে বাংলার কোনো প্রাচীন রাজা এরূপ লেখনি প্রতিভার পরিচয় দিতে পারেননি তিনি দানসাগর অদ্ভুতসাগর নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেন অবশ্য অদ্ভুতসাগর গ্রন্থের অসমাপ্ত অংশ তাঁর পুত্র লক্ষণ সেন সম্পূর্ণ করেছিলেন গ্রন্থদ্বয় তাঁর আমলের ইতিহাসের অতীব মূল্যবান উপকরণ তিনি রামপালে নতুন রাজধানী স্থাপন করেছিলেন বল- সেন তন্ত্র হিন্দু ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ফলে, তাঁর রাজত্বকালে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতিপত্তি বৃদ্ধিা পায় এবং বৌদ্ধ ধর্ম দুর্বল হয়ে পড়ে তিনি হিন্দু সমাজকে নতুন করে গঠন করার উদ্দেশ্যে কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তন করেছিলেন এর ফলে সামাজিক আচার-ব্যবহার, বিবাহ অনুষ্ঠান প্রভৃতি বিষয়ে কুলীন শ্রেণির লোকদিগকে কতকগুলো বিশেষ রীতিনীতি মেনে চলতে হতো

সব এ্যাসাইনমেন্টর উত্তর লিংক 

More Assignment Links==>>Click

বল- সেনের পর তাঁর পুত্র লক্ষণ সেন (১১৭৮-১২০৫ খ্রি:) প্রায় ৬০ বৎসর বয়সে সিংহাসনে আরোহণ করেন পিতাা পিতামহের ন্যায় লক্ষণ সেনও সুদক্ষ যোদ্ধা ছিলেন এবং রণক্ষেত্রে নৈপুণ্যের পরিচয় দেন তিনি প্রাগ-জ্যোতিষ, গৌড়, কলিঙ্গ, কাশী, মগধ প্রভৃতি অঞ্চল সেন সাম্রাজভুক্ত করেন কিন্তু তাঁর শেষ জীবন খুব সুখের ছিল না দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধবিগ্রহ পরিচালনা বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা অন্যান্য কারণে তিনি শেষ পর্যন্ত শাসনের প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়েন এবং পিতার ন্যায় গঙ্গাতীরে দ্বিতীয় রাজধানী নবদ্বীপে বসবাস করতে শুরু করেন ফলে গৌড় ভয়াবহ ষড়যন্ত্র অন্তঃবিরোধের লীলাক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং অভ্যন্তরীণ গোলযোগের সৃষ্টি হয় সুযোগে ১১৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান সুন্দরবন অঞ্চলে ডোম্মন পাল বিদ্রোহী হয়ে একটি স্বাধীন রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন

লক্ষণ সেন নিজে সুপণ্ডিত বিদ্যোৎসাহী ছিলেন পিতার অসমাপ্ত গ্রন্থ অদ্ভুতসাগর তিনিই সমাপ্ত করেছিলেন লক্ষণ সেন রচিত কয়েকটি শে-কও পাওয়া গেছে তাঁর রাজসভায় বহু পণ্ডিত জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গের সমাবেশ ঘটেছিল ধোয়ী, শরণ, জয়দেব, গোবর্ধন, উমাপতিধর প্রভৃতি প্রসিদ্ধ কবিগণ তাঁর সভা অলঙ্কৃত করতেন ভারত প্রসিদ্ধ পণ্ডিত হলায়ূধ তাঁর প্রধানমন্ত্রী ধর্মীয় প্রধান ছিলেন তাঁর সমসাময়িক অন্যান্য পণ্ডিতদের মধ্যে শ্রীধর দাস, পুরুষোত্তম, পশুপতি ঈশান বিখ্যাত কবিদের মধ্যে গোবর্ধন আর্য্যসপ্তদশী, জয়দেব গীতগোবিন্দ ধোয়ী পবনদূত কাব্য রচনা করে অমরত্ব লাভ করেছিলেন সাহিত্য ক্ষেত্র ব্যতীত শিল্প ক্ষেত্রেও বাংলা সময় উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছিল

লক্ষণ সেন পিতা পিতামহের শৈব ধর্মের প্রতি অনুরাগ ত্যাগ করে বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন বলে মনে হয় পিতা পিতামহের পরম মহেশ্বর উপাধির পরিবর্তে তিনি পরম বৈষ্ণব উপাধি গ্রহণ করেন তিনি শাস্ত্র ধর্ম চর্চায় পিতার উপযুক্ত পুত্র ছিলেন মুসলিম ঐতিহাসিক মিনহাজ তাঁর দানশীলতা ঔদার্যের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তেরো শতকের প্রথম দিকে মুসলিম সেনাপতি বখ্তিয়ার খল্জি নদিয়া আক্রমণ করেন বৃদ্ধ লক্ষণ সেন কোন প্রতিরোধ না করে নদীপথে পূর্ববঙ্গের রাজধানী বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুর আশ্রয় গ্রহণ করেন উত্তর উত্তর-পশ্চিম বাংলা বখতিয়ার খলজী সহজেই অধিকার করে নেন লক্ষণাবতীকে (গৌড়) কেন্দ্র করে বাংলায় মুসলিম সামাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় অবস্থান করে লক্ষণ সেন আরও / বৎসর রাজত্ব করেন খুব সম্ভব ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে (মতান্তরে ১২০৫ খ্রি:) তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন লক্ষণ সেনের মৃত্যুর পর তাঁর দুই পুত্র বিশ্বরূপ সেন কেশব সেন কিছুকাল (১২০৩ খ্রি: পর্যন্ত) পূর্ব বাংলা শাসন করেন তবু বলা চলে লক্ষণ সেনের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলায় সেন শাসনের অবসান ঘটে

প্রাচীন বাংলার শাসন-ব্যবস্থা

গুপ্ত শাসনের পূর্বে প্রাচীন বাংলার রাজ্যশাসন পদ্ধতি সম্বন্ধে সঠিক কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না প্রাচীন বাংলার শাসন ব্যবস্থার বিবরণ দিতে গেলে সবার আগে কৌম সমাজের কথা মনে পড়ে এদেশে গুপ্ত শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বে এই কৌম সমাজই ছিল সর্বেসর্বা তখন রাজা ছিল না, রাজত্ব ছিল না তবু শাসন-পদ্ধতি সামান্য মাত্রায় ছিল তখন মানুষ একসাথে বসবাস করত কোমদের মধ্যে পঞ্চায়েতী প্রথায় পঞ্চায়েত দ্বারা নির্বাচিত দলনেতা স্থানীয় কৌম শাসনব্যবস্থায় নেতৃত্ব দিতেন বাংলার কৌম ব্যবস্থা চিরস্থায়ী হয়নি খ্রিষ্টপূর্ব চার শতকের পূর্বেই বাংলায় কৌমতন্ত্র ভেঙ্গে গিয়ে রাজতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ ঘটেছিল

গুপ্তদের সময় বাংলার শাসন-পদ্ধতির পরিষ্কার বিবরণ পাওয়া যায় আনুমানিক দ্বিতীয়-তৃতীয় শতকে উত্তরবঙ্গ মৌর্য সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল বাংলায় মৌর্য শাসনের কেন্দ্র ছিল পুন্ড্রনগর-বর্তমান বগুড়ার পাঁচ মাইল দূরে মহাস্থানগড়ে মনে হয় মহামাত্র নামক একজন রাজ প্রতিনিধির মাধ্যমে তখন বাংলায় মৌর্য শাসনকার্য পরিচালিত হতো বাংলা গুপ্ত সাম্রাজ্যভুক্ত হলেও সমগ্র বাংলা গুপ্ত সম্রাটদের সরাসরি শাসনে ছিল না বাংলার যে অংশ গুপ্ত সম্রাটদের সরাসরি শাসনে ছিল না তা মহারাজা উপাধিধারী মহাসামন্তগণ প্রায় স্বাধীন আলাদাভাবে শাসন করতেন সমস্ত সামন্ত রাজারা সব সময় গুপ্ত সম্রাটের কর্তৃত্বকে মেনে চলতেন ধীরে ধীরে বাংলার সর্বত্র গুপ্ত সম্রাটদের শাসন চালু হয় মহাসামন্তদের অধীনে বহু কর্মচারী নিযুক্ত থাকতেন

বাংলাদেশের যে অংশ সরাসরি গুপ্ত সম্রাটদের অধীনে ছিল তা কয়েকটি প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত ছিল এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিভাগের নাম ছিল ভুক্তি প্রত্যেক ভুক্তি আবার কয়েকটি বিষয়ে, প্রত্যেক বিষয় কয়েকটি মণ্ডলে, প্রত্যেক মণ্ডল কয়েকটি বীথিতে এবং প্রত্যেকটি বীথি কয়েকটি গ্রামে বিভক্ত ছিল গ্রামই ছিল সবচেয়ে ছোট শাসন বিভাগ

সব এ্যাসাইনমেন্টর উত্তর লিংক 

More Assignment Links==>>Click

গুপ্ত সম্রাট নিজে ভুক্তির শাসনকর্তা নিযুক্ত করতেন কোনো কোনো সময় রাজকুমার বা রাজপরিবার থেকেও ভুক্তির শাসনকর্তা নিযুক্ত করা হতো ভুক্তিপতিকে বলা হত উপরিক পরবর্তী সময়ে শাসকগণ উপরিক মহারাজ উপাধি গ্রহণ করতেন সাধারণত উপরিক মহারাজ- তাঁর বিষয়গুলোর শাসনকর্তা নিযুক্ত করতেন কিন্তু কোনো কোনো সময়ে সম্রাট নিজে তাদের নিয়োগ করতেন গুপ্তযুগের ভুক্তি বিষয়গুলোকে বর্তমান সময়ের ন্যায় বিভাগ জেলার সাথে তুলনা করা যেতে পারে গুপ্তদের সময় বাংলার বেসামরিক শাসন পদ্ধতি সম্পর্কে সামান্য তথ্য পাওয়া যায় কিন্তু সামরিক শাসন সম্পর্কে কোনো তথ্যই পাওয়া যায় না তেমনিভাবে রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কেও আমাদের জ্ঞানও খুবই কম ব্যাপারে মাত্র কয়েকজন কর্মচারীর নাম পাওয়া যায় হতে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, গুপ্তদের সময়ে মোটামুটি একটি সুষ্ঠু রাজস্ব ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল

ছয় শতকে উত্তর-পশ্চিম বাংলায় গুপ্তবংশের শাসন শেষ হয়ে যায় বঙ্গ স্বাধীন আলাদা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে তখন বঙ্গে যে নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল তা মূলত গুপ্ত আমলের প্রাদেশিক শাসনের মতোই ছিল গুপ্তদের সময়ে রাজতন্ত্র ছিল সামন্ত নির্ভর আমলে তার পরিবর্তন হয়নি বরং সামন্ততন্ত্রই আরও প্রসার লাভ করেছে গুপ্ত রাজাদের মতো বাংলার সামন্ত রাজাগণও মহারাজাধিরাজ উপাধি গ্রহণ করতেন এঁরাও বিভিন্ন শ্রেণির বহুসংখ্যক রাজকর্মচারী নিয়োগ করতেন

আট শতকের মাঝামাঝি সময়ে পাল বংশের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গের নতুন যুগের শুরু হয় পাল বংশের চার শতাব্দীর রাজত্বকালে বঙ্গে তাদের শাসন-ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্বের মতো পাল যুগেও শাসন-ব্যবস্থার মূল কথা হলো রাজতন্ত্র কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন বিভাগের সর্বোচ্চ ছিলেন রাজা স্বয়ং পরাক্রান্ত পাল রাজারা প্রাচীন বাংলার মহারাজ বা পরবর্তীকালের মহারাজাধিরাজ পদবীতে সন্তুষ্ট থাকেননি গুপ্ত সম্রাটগণের মতো তাঁরাও পরমেশ্বর, পরমভট্টারক, মহারাজাধিরাজ প্রভৃতি গৌরবময় উপাধি গ্রহণ করেছিলেন রাজার পুত্র রাজা হতেন নিয়ম থাকা সত্ত্বেও ভ্রাতা রাজ পরিবারের অন্যান্য নিকট আত্মীয়দের মধ্যে সিংহাসন নিয়ে বিরোধ সংঘর্ষ হতো সময় হতে সর্বপ্রথম একজন প্রধানমন্ত্রী বা প্রধান সচিবের উলে- পাওয়া যায় তিনি ছিলেন সর্বপ্রধান রাজ কর্মচারী

রাজ্যের সকল প্রকার শাসনকার্যের জন্য কতকগুলো নির্দিষ্ট শাসন-বিভাগ ছিল এর প্রতিটি বিভাগের জন্য একজন অধ্যক্ষ নিযুক্ত থাকতেন রাজা মন্ত্রী আমাত্যগণের সাহায্যে কেন্দ্রীয় শাসন পরিচালনা করতেন পিতা জীবিত থাকলেও অনেক সময় যুবরাজ শাসনকার্য পরিচালনা করতেন

কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ের বিভিন্ন উৎস ছিল এর মধ্যে নানা প্রকার কর ছিল প্রধান বিভিন্ন রকমের রাজস্ব আদায়ের জন্য বিভিন্ন শ্রেণির কর্মচারী নিযুক্ত ছিল রাজস্ব আয়-ব্যয়ের হিসাব দলিল বিভাগ দেখাশুনা করার ব্যবস্থা ছিল ভূমি রাজস্বের পরিমাণ ঠিক করার জন্য জমি জরিপের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হতো মুদ্রা এবং শস্যের আকারে রাজস্ব আদায় হতো পাল রাজাদের সময়ে শান্তি রক্ষার জন্য সুন্দর বিচার পুলিশ বিভাগ ছিল সময়ে গোপন সংবাদ সংগ্রহের জন্য গুপ্তচর বাহিনী ছিল পদাতিক, অশ্বারোহী, হস্তী রণতরী- কটি বিভাগে সামরিক বাহিনী বিভক্ত ছিল

গুপ্তদের মতো পালদের সময়েও সামন্ত রাজাদের উলে- পাওয়া যায় এঁদের নানা উপাধি ছিল কেন্দ্রীয় শাসনের শৌর্যখ বীর্য সামন্তদের অধীনতায় থাকতে বাধ্য করত অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় শক্তির দুর্বলতার সুযোগে এঁরা স্বাধীনতা ঘোষণা করতেন পাল শাসকদের শক্তি অনেকাংশে এরূপ সামন্তরাজদের সাহায্য সহযোগিতার উপর নির্ভর করত

পাল রাজ্যে যে শাসন-পদ্ধতি প্রচলিত হয়েছিল তা পরবর্তী সময়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশ সেন রাজত্বকালে রাষ্ট্র শাসনের আদর্শ হিসেবে স্বীকৃত লাভ করে অবশ্য কোনো কোনো বিষয়ে কিছু কিছু পরিবর্তন ঘটেছিল সেন বংশীয় রাজারা পাল রাজাদের রাজ-উপাধি ছাড়াও নানাবিধ উপাধি ধারণ করতেন সময়ে রানীকে রাজকীয় মর্যাদা দেয়া হয়েছে শাসনকার্যে যুবরাজদের যথেষ্ট প্রভাব ছিল জ্যৈষ্ঠ রাজকুমার যুবরাজ হতেন পূর্বের মতো সেনদের সময়েও অনেক সামন্ত শাসক ছিলেন তাঁদের শক্তি প্রভাব খুব প্রবল ছিল সকল সামন্তরা প্রকৃতপক্ষে নিজ নিজ অঞ্চলে স্বাধীন রাজার মতোই চলতেন

মোটামুটিভাবে এই ছিল প্রাচীন বাংলার শাসন-পদ্ধতি শাসন ব্যবস্থায় বিদেশিদের প্রভাব কি পরিমাণ ছিল তা বলা যায় না পণ্ডিতদের মতে, শাসন পদ্ধতির ব্যাপারে বাংলাদেশ সে সময়ে ভারতের অন্যান্য অংশের তুলনায় মোটেই পিছিয়ে ছিল না

সব এ্যাসাইনমেন্টর উত্তর লিংক 

More Assignment Links==>>Click

 


Post a Comment

0 Comments

advertisement

advertisement