রোগীর অস্ত্রোপচার করে ওয়ার্ডবয়

Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated

 

রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও শ্যামলীতে নামে-বেনামে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ভুঁইফোড় হাসপাতাল ও ক্লিনিক। কৌশলে অন্য হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে আনা অসহায় রোগীদের পুুুুুুুুুুঁজি করেই মূলত চলছে এগুলো। আর সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের স্বল্পমূল্যে উন্নত চিকিৎসার কথা বলে কমিশনের বিনিময়ে ভাগিয়ে আনার কাজটি করছে কয়েকটি দালাল চক্র। হাসপাতালগুলোতে নেই কোনো ডিগ্রিধারী চিকিৎসক। হাসপাতাল মালিক বা পরিচালকের সিদ্ধান্তেই চলে রোগীর চিকিৎসা। উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার কথা বললেও কোনো কোনো হাসপাতালে অপরিষ্কার ও ফ্লোরে রক্তমাখা কাপড় ও ওয়ার্ড বয়কে দিয়ে করানো হয় গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন। তাদের অপচিকিৎসায় অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করার পাশাপাশি ভুগছেন জটিল রোগে।

অপচিকিৎসাসহ এ ধরনের নানা অনিয়মের অভিযোগে গত বুধবার দিবাগত রাত ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী এলাকার মক্কা-মদিনা জেনারেল হাসপাতাল, নূরজাহান অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও ক্রিসেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডে র‌্যাবের যৌথ অভিযানের পর বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও র?্যাব ২-এর একটি দলের সহায়তায় পৃথক অভিযানে নেতৃত্ব দেন র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। এসব অপরাধে দুটি হাসপাতাল সিলগালা এবং পরিচালক ও ওয়ার্ড বয়সহ ৬ জনকে কারাদ- দিয়েছেন আদালত। দ-প্রাপ্তদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জানান, অভিযান চালানো বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আসছিল। এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- অসহায় রোগীদের জিম্মি করে নামসর্বস্ব ভুয়া চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ছাড়া জটিল অস্ত্রোপচার, অপচিকিৎসায় রোগীদের মারাত্মক ক্ষতিসহ প্রাণহানি, রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের বিল আদায়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ প্রভৃতি। এ ছাড়া জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ রোগীদের ভাগিয়ে একটি দালাল চক্র বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেত বলেও অভিযোগ মিলেছে।

গোয়েন্দাদের তথ্য-উপাত্ত ও ভুক্তভোগীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনার পর জানা গেছে, যারা এসব হাসপাতাল পরিচালনা করছেন, তাদের কেউ কেউ একেবারেই অশিক্ষিত। আবার কেউ টেনেটুনে এসএসসি পাস করলেও পেরোতে পারেননি এইচএসসির গ-ি। তবু তারা হাসপাতাল খুলে রোগী দেখে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিতেন। আবার কেউ কেউ প্রাইমারির গ-িই পেরোতে পারেননি। তারাই করছেন অপারেশন। এতে যারা প্রতারিত হয়ে তাদের কাছে আসছেন, তারা শেষ পর্যন্ত অঙ্গহানির শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।

পলাশ কুমার বসু জানান, মোহাম্মদপুর ও শ্যামলীতে অবস্থিত হাসপাতালগুলোতে দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে আসে। এর পর তারা কম খরচে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার আশ্বাস দেয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় সরকারি হাসপাতালে সাধারণ মানুষ আসে চিকিৎসা নিতে। যারা বেশিরভাগই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তারাই মূলত এসব দালাল চক্রের খপ্পরে পড়েন। দালালরা রোগী আনার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া। বিশেষ করে অপারেশনের সিরিয়াল পেতে দেরি হবে, ততদিনে রোগী বাঁচবে না- দালালদের এ ধরনের কথায় রোগীর স্বজনরাও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ওই চক্রের খপ্পরে পড়ে যান।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক হাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন (৫০) এইচএসসি পাস বলে দাবি করলেও সার্টিফিকেট দেখাতে পারেননি। কিন্তু এই আবুল-ই একাধারে হাসপাতালটির পরিচালক ও রোগীদের ভাঙ্গা হাত-পায়ের এক্সরে দেখে অপারেশনের সিদ্ধান্ত দেন। মাধ্যমিক পাস করেই তিনি অধ্যাপক পরিচয়ে চিকিৎসা করতেন। ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অনুমোদন মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে চার মাস আগে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আবুল হোসেনকে এক বছরের কারাদ- ও হাসপাতালটিকে সতর্ক করা হয়েছে।

পলাশ কুমার বসু আরও জানান, অভিযানের শুরুতেই মক্কা-মদিনা হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। কোনো ধরনের চিকিৎসা প্রদানের সনদ বা অনুমোদন নেই সেখানকার পরিচালক নূর-নবীর। অথচ তিনি হাসপাতালে তার চেম্বারে বসে রোগী দেখছেন এবং ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। হাত ভাঙাসহ বিভিন্ন গুরুতর আহত যেসব রোগী আসছেন, তাদের অপারেশন করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন; যা তিনি কোনোভাবেই দিতে পারেন না। এ অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নূর-নবীকে এক বছরের কারাদ-সহ আনোয়ার হোসেন কালু ও তার সহযোগী আবদুর রশিদকে ছয় মাস করে সাজা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মক্কা-মদিনা হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। একই অপরাধে নূরজাহান হাসপাতালের মালিক বাবুল হোসেনকে এক বছর এবং ওয়ার্ড বয় জাহাঙ্গীরকে দুই বছরের কারাদ- দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এই হাসপাতালটিও সিলগালা করা হয়েছে। রোগীর অস্ত্রোপচারকারী ওটি বয় জাহাঙ্গীর হোসেন পঞ্চম শ্রেণি পাস। এই হাসপাতালসহ এলাকার অন্য হাসপাতালে রোগী সরবরাহ করত দালাল নেতা বাবুল হোসেন। অভিযানের পর হাসপাতালগুলোতে থাকা রোগীদের সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

র?্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, আমরা চাই রোগীরা কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে যেন এমন এইচএসসি পাস চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসার নামে প্রতারিত না হন। এমন অপচিকিৎসা মানুষের অর্থ ও জীবনের জন্য খুবই বিপজ্জনক। জনস্বার্থে এমন হাসপাতাল সিলগালা করা হয়েছে। হাসপাতালের অনিয়মের প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে, যাতে করে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।



Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.