বিবাহ ও বাসর রাতের সুন্নত সমূহ,বাসর রাতে ৯টি সুন্নাত,সহবাসের ১২টি সুন্নত,স্ত্রী সহবাসের সঠিক নিয়ম,স্ত্রী সহবাসের ইসলামিক নিয়ম

 

জিজ্ঞাসা–১০২১: ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী কীভাবে সুন্নত অনুসারে বিয়ে করব?


দ্বিতীয় প্রশ্নঃ সুন্নত অনুসারে কিভাবে সহবাস করব?


তৃতীয় প্রশ্নঃ আমি মাদ্রাসা লাইনে পড়িনি কিন্তু আমার আলেম মেয়েকে বিয়ে করতে ইচ্ছে করে আমি কি করতে পারব?–Solaiman


জবাব: 


এক. বিবাহের সুন্নাতসমূহ:


প্রিয় ভাই, বাস্তবতা হল, যে সমাজে  বিয়ে সহজ হবে, সেই সমাজে ব্যভিচার কঠিন হবে।  পক্ষান্তরে যে সমাজে বিয়ে কঠিন হবে, সেই সমাজে ব্যভিচার সহজ হয়ে পড়বে। এজন্য বিয়ের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ-র মূল সুন্নাহ ছিল সহজ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। এরপর স্বামী-স্ত্রী সৎভাবে সংসার করবে এবং সৎভাবে সংসার করার যাবতীয় উপকরণ গ্রহণ করবে।


সংক্ষিপ্তভাবে এটাই নবীজির আদর্শ; এবার ধারাবাহিকভাবে বিস্তারিত আলোচনায় আসুন:


১. বিয়ের নিয়ত শুদ্ধ করা : নারী-পুরুষের উভয়ের উচিত বিয়ের মাধ্যমে নিজেকে হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে বাঁচানোর নিয়ত করা। তাহলে উভয়ে এর দ্বারা ছাদাকার ছাওয়াব লাভ করবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,


وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةً ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ ، أَيَأْتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ ، وَيَكُونُ لَهُ فِيهِ أَجْرٌ ؟ قَالَ : أَرأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي الْحَرَامِ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ ؟ فَكَذَلَكَ إِذا وَضَعَهَا فِي الْحَلالِ كَانَ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ.


‘তোমাদের সবার স্ত্রীর যোনিতেও রয়েছে ছাদাকা। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমাদের কেউ কি তার জৈবিক চাহিদা মেটাবে আর তার জন্য সে কি নেকী লাভ করবে? তিনি বললেন, ‘তোমরা কি মনে করো যদি সে ওই চাহিদা হারাম উপায়ে মেটাতো তাহলে তার জন্য কোনো গুনাহ হত না? (অবশ্যই হতো) অতএব তেমনি সে যখন তা হালাল উপায়ে মেটায়, তার জন্য নেকী লেখা হয়।’ (মুসলিম ১৬৭৪)


২. ইস্তিখারা করা : মুসলিম নর-নারীর জীবনে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাই যখন তারা বিবাহের সিদ্ধান্ত নেবেন তাদের জন্য কর্তব্য হলো ইস্তিখারা তথা আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করা। জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চায় সে যেন দু’রাকাত নফল নামাজ পড়ে অতপর বলে–


اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ فَإِنَّكَ تَقْدِرُ ، وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ ، وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ، أَوْ قَالَ عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ – فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ، أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ – فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ وَاقْدُرْ لِي الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ أَرْضِنِي.


‌‘হে আল্লাহ, আমি আপনার ইলমের মাধ্যমে আপনার নিকট কল্যাণ কামনা করছি। আপনার কুদরতের মাধ্যমে আপনার নিকট শক্তি কামনা করছি এবং আপনার মহা অনুগ্রহ কামনা করছি।‌ কেননা আপনি শক্তিধর, আমি শক্তিহীন, আপনি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন এবং আপনি অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী।  হে আল্লাহ, এই কাজটি (এখানে উদ্দিষ্ট কাজ বা বিষয়টি উল্লেখ করবেন) আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, আমার জীবিকা এবং আমার পরিণতির ক্ষেত্রে অথবা ইহলোক ও পরলোকে কল্যাণকর হয়, তবে তাতে আমাকে সামর্থ্য দিন। পক্ষান্তরে এই কাজটি আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, জীবিকা ও পরিণতির দিক দিয়ে অথবা ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিকর হয়, তবে আপনি তা আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং আমাকেও তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং কল্যাণ যেখানেই থাকুক, আমার জন্য তা নির্ধারিত করে দিন। অত:পর তাতেই আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন। (বুখারী ১১৬৬)


৩. পরামর্শ করা : বিয়ে ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ, পাত্রী ও তার পরিবার সম্পর্কে ভালো জানাশুনা রয়েছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করা। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাহাবীদের সঙ্গে অধিক পরিমাণে পরামর্শ করতেন। আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,


مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَكْثَرَ مَشُورَةً لأَصْحَابِهِ مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ


‘আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-র চেয়ে অন্য কাউকে আপন সাথীদের সঙ্গে বেশি পরামর্শ করতে দেখি নি।’ (তিরমিযী ১৭১৪)


৪. সৎ ও খোদাভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করে বিবাহের পয়গাম পাঠানো এবং কোন বাহানা বা সুযোগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া: জাবের ইবন আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,


إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَقَدَرَ عَلَى أَنْ يَرَى مِنْهَا مَا يُعْجِبُهُ وَيَدْعُوهُ إِلَيْهَا فَلْيَفْعَلْ. قَالَ جَابِرٌ : فَلَقَدْ خَطَبْتُ امْرَأَةً مِنْ بَنِى سَلِمَةَ فَكُنْتُ أَتَخَبَّأُ فِى أُصُولِ النَّخْلِ حَتَّى رَأَيْتُ مِنْهَا بَعْضَ مَا أَعْجَبَنِى فَتَزَوَّجْتُهَا


‘তোমাদের কেউ যখন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, অতপর তার পক্ষে যদি ওই নারীর এতটুকু সৌন্দর্য দেখা সম্ভব হয়, যা তাকে মুগ্ধ করে এবং মেয়েটিকে (বিবাহ করতে) উদ্বুদ্ধ করে, সে যেন তা দেখে নেয়।’ (বাইহাকী, সুনান কুবরা ১৩৮৬৯)


উল্লেখ্য, আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানোর যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত, তা সুন্নাতের পরিপন্থী ও পরিত্যাজ্য।-(ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/২০০)


৫. সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর হওয়া এবং আবশ্যক হল, অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি, গান-বাদ্য, ভিডিও-অডিও মুক্ত হওয়া: আল্লাহ তাআ’লা বলেন,


إِنَّ الْمُبَذِّرِينَ كَانُوا إِخْوَانَ الشَّيَاطِينِ ۖ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا 

‘নিশ্চয় অপচয়কারী শয়তানের ভাই। আর শয়তান হচ্ছে তার প্রভুর প্রতি বড় অকৃতজ্ঞ।’ (বনী ইসরাঈল ২৭)

৬. যৌতুকের আলোচনা বা সামর্থ্যের অধিক মহরানার শর্ত না থাকা; বরং মহরানা সামর্থ্যানুযায়ী ধার্য করা : কেননা, আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,


إِنَّ مِنْ يُمْنِ الْمَرْأَةِ : تَيْسِيرَ خِطْبَتِهَا ، وَتَيْسِيرَ صَدَاقِهَا ، وَتَيْسِيرَ رَحِمِهَا

কনের বরকতের আলামত হচ্ছে- বিয়ের প্রস্তাবনা সহজ হওয়া, মোহরানা সহজসাধ্য হওয়া এবং গর্ভ ধারণ সহজ হওয়া। (মুসনাদে আহমাদ ২৩৯৫৭)

অন্যত্র নবীজি ﷺ বলেছেন, خَيْرُ الصَّدَاقِ أَيْسَرَه‘সর্বোত্তম মোহরানা হচ্ছে- সহজসাধ্য মোহরানা।’ (বাইহাকী ১৪৭২১)

৭. শাওয়াল মাসে বিবাহ সম্পাদন করা: আয়েশা রাযি. বলেন,


تَزَوّجَنِي رَسُولُ اللهِ ﷺ فِي شَوّالٍ، وَبَنَى بِي فِي شَوّالٍ، فَأَيّ نِسَاءِ رَسُولِ اللهِ ﷺ كَانَ أَحْظَى عِنْدَهُ مِنِّي؟


‘রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে শাওয়াল মাসেই বিয়ে করেছেন এবং শাওয়াল মাসেই আমার বাসর করেছেন। সুতরাং তার নিকটে আমার চেয়ে অধিক সৌভাগ্যবতী স্ত্রী আর কে আছে?’ (সহীহ মুসলিম ১৪২৩)


উল্লেখ্য, সকল মাসের যে কোন দিন বিবাহ করা জায়েয আছে।


৮. বিবাহের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং জুমা’র দিন মসজিদে সম্পাদন করা: আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

أَعْلِنُوا هَذَا النِّكَاحَ وَاجْعَلُوهُ فِي الْمَسَاجِدِ

‘তোমরা এ বিয়ের ঘোষণা দাও এবং তা মসজিদে সম্পাদন কর।’ (তিরমিযি ১০৮৯)

৯. রাসূল ﷺ -র শেখানো অভিনন্দনের মাধ্যমে বরকে অভিনন্দন জানানো: আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত যে, যখন কেউ বিয়ে করত তখন নবীজি ﷺ শুভেচ্ছা জানাতেন ও তার জন্য দোয়া করতেন এই বলে: بَارَكَ اللَّهُ لَكَ ، وَبَارَكَ عَلَيْكَ ، وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِي خَيْرٍ (অর্থ- আল্লাহ তোমাকে বরকত দিন, তোমার ওপর বরকত ঢেলে দিন এবং তোমাদের দুইজনকে কল্যাণের ওপর একত্রিত করুন)। (সুনানে আবু দাউদ ২১৩০)

১০. ওয়ালিমা বা বৌভাত: বিয়ের ক্ষেত্রে ওয়ালিমার আয়োজন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি বিয়ের প্রচারণার অন্তর্ভুক্ত এবং আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করার শামিল।


আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত যে, আব্দুর রহমান বিন আউফ রাযি. যখন বিয়ে করেছেন তখন নবী ﷺ তাকে বলেন, أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ ‘একটি ছাগল দিয়ে হলেও তুমি ওয়ালিমার আয়োজন কর।’  (বুখারী ও মুসলিম)


উল্লেখ্য, ওয়ালিমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উঁচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরী নয়। বরং সামর্থ্যানুযায়ী খরচ করাই সুন্নাত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওয়ালিমা শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত করা হয়, দীনদার ও গরীব-মিসকিনদের দাওয়াত করা হয় না, সে ওয়ালিমাকে হাদীসে নিকৃষ্টতম ওয়ালিমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের নিকৃষ্ট ওয়ালিমার আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত। (আবু দাউদ ৩৭৫৪)


তাছাড়া সহিহ বুখারীর বর্ণনায় (৪২১৩) আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, নবী ﷺ খায়বার ও মদিনার মাঝে তিনদিন অবস্থান করেছিলেন। এ সময় তিনি সাফিয়্যা রাযি.-কে বিয়ে করেন। আমি মুসলমানদের সকলকে তাঁর বিয়ের ওয়ালিমার দাওয়াত দিলাম। সে ওয়ালিমাতে রুটি বা গোশত কিছুই ছিল না। সে ওয়ালিমাতে কিছুই ছিল না; শুধু নবী ﷺ বিলাল রাযি.-কে চামড়ার চাটাই বিছানোর নির্দেশ দিলেন; চাটাই বিছানো হল। এরপর সে চাটাই এর ওপর খেজুর, পনির ও ঘি ছিটিয়ে দেয়া হল।


দুই. বাসর রাতের সুন্নাতসমূহ:


স্বামী যখন স্ত্রীর সাথে বাসর করবেন তখন নিম্নোক্ত বিষয়গুলো পালন করা সুন্নাত:


১. বাসর ঘরে স্ত্রীর সাথে কোমল আচরণ করা: আসমা বিনতে উমাইস রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, আমি ছিলাম আয়েশা রাযি. এর বান্ধবী। আমি আরও কিছু মহিলাকে সাথে নিয়ে তাকে রাসূল ﷺ-এর জন্য প্রস্তুত করে দিয়েছি ও তাঁর ঘরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছি। আসমা রাযি. বলেন ,আল্লাহর শপথ, আমরা তাঁর ঘরে মেহমানদারি হিসেবে এক পেয়ালা দুধ ছাড়া আর কিছু পাইনি। তিনি সে পেয়ালা থেকে কিছুটা পান করলেন, এরপর আয়েশা রাযি.-কে দিলেন। অল্পবয়সী মেয়েটি লজ্জাবোধ করল। তখন আমরা বললাম, আল্লাহর রাসূলের হাত ফিরিয়ে দিও না; গ্রহণ কর। তখন সে ইতস্তত করে হাতে নিল এবং সেটা থেকে পান করল। অতঃপর রাসূল ﷺ বললেন, তোমার বান্ধবীদেরকে দাও। আমরা বললাম, আমাদের চাহিদা নেই। তিনি বললেন, তোমরা ক্ষুধা ও মিথ্যা দুটোকে একত্র করো না। (মুসনাদে আহমাদ ২৬৯২৫)


২. স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে তার জন্য দোয়া করা: আমর বিন শুয়াইব থেকে তিনি তাঁর পিতা থেকে তিনি তাঁর দাদা থেকে তিনি নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন কোন নারীকে বিয়ে করে তখন সে যেন স্ত্রীর মাথার অগ্রভাগ ধরে বলে–


اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَمِنْ شَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ


(অর্থ- হে আল্লাহ! আমি তাঁর কল্যাণটুকু এবং যে কল্যাণের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, অভ্যস্ত করেছেন সেটা প্রার্থনা করি। আর তার অনিষ্ট থেকে ও যে অনিষ্টের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, অভ্যস্ত করেছেন তা থেকে আশ্রয় চাই)। (সুনানে আবু দাউদ ২১৬০)


৩. কোন কোন সলফে সালেহীন স্বামী-স্ত্রী একত্রে দুই রাকাত নামায আদায় করাকে মুস্তাহাব গণ্য করেছেন: ইবনে আবি শাইবা শাকীক থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি.-এর কাছে এক লোক এসে বলল, আমি এক যুবতী মেয়েকে বিয়ে করেছি। আমি আশংকা করছি- সে আমাকে অপছন্দ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, আব্দুল্লাহ বললেন, মিল-মহব্বত আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। দূরত্ব ও ঘৃণা শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আল্লাহ যা হালাল করেছেন শয়তান সেটাকে তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় করে তুলতে চায়। যখন সে তোমার কাছে আসবে তখন তাকে তোমার পিছনে দুই রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিবে। (মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা ১৭১৫৬)


৪. স্বামী যখন স্ত্রী সহবাস করতে চাইবে তখন বলবে:


بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا


‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ।’


রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এরপরে যদি তাদের দু’জনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী ৪৭৮৭)


৫. সদভাবে সংসার করার নিয়ত করা, স্ত্রীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা এবং স্ত্রীও স্বামীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করা: আল্লাহ  তাআলা বলেন,


وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا

আর তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে। তোমরা যদি তাদেরকে অপছন্দ কর তবে এমন হতে পারে যে, আল্লাহ্‌ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ। (সূরা নিসা ১৯)রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,


إِذَا صَلَّتْ الْمَرْأَةُ خَمْسَهَا وَصَامَتْ شَهْرَهَا وَحَفِظَتْ فَرْجَهَا وَأَطَاعَتْ زَوْجَهَا قِيلَ لَهَا : ادْخُلِي الْجَنَّةَ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ شِئْتِ


‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে, রমযান মাসে রোযা রাখে, নিজের যৌনাঙ্গ হেফাযতে রাখে, স্বামীর আনুগত্য করে; তাকে বলা হবে: তুমি জান্নাতের যে দরজা ইচ্ছা হয় সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (মুসনাদে আহমাদ ১১৬১)


সহবাসের সুন্নাত তরীকা  সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন জিজ্ঞাসা নং–৫৭৮।


তিন. দীনদার আলেমা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইলে অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য কোন আলেমের সঙ্গে সরাসরি পরামর্শ করুন।


والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেন

শায়েখ উমায়ের কোব্বাদী

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Hollywood Movies